৫০ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা

মাধব দত্ত, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি || সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শফিকুর রহমান সোমবার বিকেলে আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও এক জামায়াত কর্মীসহ বিএনপি’র ৫০ জন নেতা কর্মীকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখিত আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ শিক্ষা সম্পাদক সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব (৪৫), উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি আশরাফ হোসেন (৪৫), উপজেলার যুবদলের সভাপতি আব্দুল কাদের বাচ্চু (৪২), পৌর যুবদলের সাধারন সম্পাদক আরিফুর রহমান রনজু (৪০), উপজেলা মৎস্য দলের সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম(৪৬), সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি রিপন (৩৫), বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাক (৪৮), উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ তামিম আজাদ মেরিন (৪৫), উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল রকিব মোল্যা (৪৩), কলারোয়া পৌর সভার মেয়র বিএনপি নেতা গাজী আক্তারুল ইসলাম (৩৮), বিএনপি নেতা মফিজুল ইসলাম(৪৪), পৌর ছাত্র দলের সভাপতি আব্দুল মজিদ (৩০), বিএনপি নেতা অ্যাড. আব্দুস সামাদ (৫২), বিএনপি নেতা হাসান আলী (৪৫), উপজেলা কৃষকদলের সাধারন সম্পাদক ইয়াছিন আলী (৫৫), বিএনপি নেতা ময়না (৩৮), বিএনপি নেতা শিক্ষক আব্দুস সাত্তার (৫০), সাবেক উপজেলা ছাত্র দালের সভাপতি খালেদ মজ্ঞুর রোমেল (৪২), বিএনপি নেতা কলেজ শিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন ছেন্টু (৫০), যুবনেতা মাজাহারুল ইসলাম (৪৫), বিএনপি নেতা আব্দুল মালেক (৩৮), বিএনপি নেতা আব্দুর রব (৪৬), উপজেলা কেরালকাতা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক জহুরু ইসলাম (৪৩), যুগীখালী ই্উপি চেয়ারম্যান উপজেলা বিএপির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রবিউল ইসলাম (৫০), পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রসুল (৪৮), সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক বিএনপি নেতা অ্যাড. আব্দুস সাত্তার (৫২), যুবদল নেতা রিংকু (৩২), যুবদল নেতা আব্দুস সামাদ (৪৮), বিএনপি নেতা আলাউদ্দীন (৩৪), যুবদলনেতা আলতাফ হোসেন (৩৮), উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তৌফিকুর রহমান সনজু (৩৩), ছাত্র দলের সহ সভাপতি নাজমুল হোসেন (৩০), বিএনপি নেতা সাহাবুদ্দিন (৪৯), বিএনপি নেতা সাহেব আলী (৪৮), বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম (৫৫), যুবনেতা টাইগার খোকন (৩৮), যুব নেতা ট্রলি সহিদুল (৪২), বিএনপি নেতা কনক (৩৮), পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ কামরুল হোসেন (৫০), যুবদল নেতা মনিরুল ইসলাম (৩০), যুবদলনেতা ইয়াছিন আলী (৩৫), পৌর বিএনপির সহ সভাপতি আখলাকুর রহমান শেলী (৩২), বিএনপি নেতা শাহিনুর রহমান (৫২), বিএনপি নেতা বিদার মোড়ল (৪০), যুবদল নেতা সোহাগ হোসেন (২৮), বিএনপি সমর্থক মাহাফুজার রহমান মোল্যা (৩৮), জামায়াত কর্মী গফ্ফার গাজী (৪০), সাবেক উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি মাহাফুজুর রহমান সাবু(৫০)।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদী গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিব ও বিএনপি নেতা রঞ্জুর নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস(সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমানকে গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে মারপিট করা হয়। তার কাছে থাকা সাড়ে ১১ হাজার টাকা ছিনতাই করা হয়। মারিপট করে জখম করা হয় নেত্রীর গাড়ি বহরে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল হক রাসেল, রমনা এলাকার যুব মহিলা লীগের নেত্রী ফতেমা জামান সাথী, আওয়ামী লীগ কর্মী আব্দুল মতিনসহ কয়েকজন। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক থানার ভিতরে আশ্রয় নিলেও তাদেরকেও পিটিয়ে জখম করা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় তাদের ক্যামেরা। ছিনিয়ে নেওয়া হয় মোবাইল, ঘড়ি ও টাকা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরের ঢাকা মেট্রো-গ- ১২ -৫৩৪২ পাজারু গাড়িটি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় কলারোয়া থানা মামলা না নেওয়ায় ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া উপজেলা (আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ) মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে একটি মামলা (সিআরপি-১১৭১/০২) দায়ের করেন। মামলায় ১৮জনকে সাক্ষী করা হয়। বিচারক এম আই ছিদ্দিকী তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়াকে নির্দেশ দেন। তদন্তকারি কর্মকর্তা ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঘটনা মিথ্যা বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

তদন্তকালে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম গোলাম কিবরিয়া ৩৫ জনের ১৬১ ধারায় সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন মর্মে আদালতকে অবহিত করেন। সাক্ষীরা ঘটনা সঠিক নয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন। এদের মধ্যে অন্যতম সাক্ষী হিসেবে নব্য আওয়ামী লীগার লাঙ্গলঝাড়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম, দৈনিক পত্রদূতের সাংবাদিক জুলফিকার আলী জিল্লু, বর্তমান কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, সাবেক সভাপতি ও সাংসদ বিএম নজরুল ইসলাম, সাবেক কেড়াগাছি ইউপি চেয়ারম্যার আলতাফ হোসেন লাল্টু, শহীদুল ইসলাম, শওকত হোসেন, প্রভাষক সাংবাদিক জাভিদ হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু, ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মিনি, দৈনিক লোকসমাজের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মাসুদ হোসেন, আল মোদাজ্জেদ এর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি কাজী শওকত হোসেন ময়না, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি রুহুল কুদ্দুস, সংগ্রাম ও বিটিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জামায়াত নেতা আলতাফ হোসাইনের ১৬১ ধারায় জবানবন্দির নীচে নিজ নিজ সাক্ষর দেখিয়ে আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

বারবার তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছে যেয়েও তিনি জবানবন্দি না নিয়ে নিজের মনগড়া কথা ১৬১ ধারার জবানবন্দি হিসেবে উল্লেখ করেছেন বলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এফিডেফিড দিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির হয়ে বিচারককে অবহিত করেন সাক্ষী ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, শওকত হোসেন, শহীদুল ইসলাম, প্রভাষক জাভিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম লাল্টু ও আলতাফ হোসেন লালু।

বাদী মোসলেমউদ্দিন পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে ২০০৪ সালের ২২ জানুয়ারি আদালতে নারাজির আবেদন জানালে শুনানী শেষে তা খারিজ হয়ে যায়। এ খারিজ আবেদনের বিরুদ্ধে বাদি ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা ( ১৭/০৪) দায়ের করেন। ২২ এপ্রিল শুনানী শেষে বিচারক একেএম জহিরউদ্দিন এ রিভিশন আবেদন খারিজ করে দেন। নিরুপায় হয়ে ২০০৪ সালের ৪ আগষ্ট বাদী এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে ক্রিমিনাল মিস কেস (৫৮৯৩/০৪) দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে বিচারক এম এনায়েতুর রহিম ও আকরাম হুসাইন চৌধুরী ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আপিল মঞ্জুর করে নিম্ন আদালতের আদেশের উপর স্থগিতাদেশ দেন। একইসাথে নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। আদেশের কপি দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর ফাইলবন্দি থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এসে পৌঁছায়। ১৭ সেপ্টেম্বর বাদির উপস্থিতিতে নারাজির শুনানী করার জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ১৫ অক্টোবর ২০১৪ দিন ধার্য করেন। ওই দিন বিচারক শুনানী শেষ অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ওই দিনই মামলাটি থানায় রেকর্ড হওয়ার পর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শফিকুর রহমানকে তদন্তকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে সাড়ে ছয় মাস পর গতকাল বিকেলে আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

এ ব্যাপারে মামলার বাদি কলারোয়ার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন জানান, অভিযোগপত্র হাতে পাওয়ার পর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা না বলে কোন মন্তব্য করা যাবে না।

Print
2156 মোট পাঠক সংখ্যা 1 আজকের পাঠক সংখ্যা

About jexpress

Close