আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন তা নিয়ে ঘরে-বাইরে কৌতূহলের শেষ নেই। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সামনে রেখে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। তবে কাউন্সিলে প্রার্থিতার বয়সসীমা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হওয়ায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন সংগঠনটির নেতা ও পদপ্রার্থীরা। ছাত্রলীগের ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ কাউন্সিলে পদপ্রার্থীদের বয়সসীমা ছিল অনূর্ধ্ব ২৯ বছর। কিন্তু সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে লেখা আছে ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্যের বয়স হবে অনূর্ধ্ব ২৭ বছর। এদিকে বর্তমান কমিটির মেয়াদ দুই বছর পেরিয়ে চার বছর হওয়ায় অনেকের বয়সসীমা অতিক্রম করে গেছে। এ অবস্থায় অনেক অভিজ্ঞ নেতাই এবার প্রার্থী হতে পারছেন না। ফলে তারা তাকিয়ে আছেন ছাত্রলীগের প্রধান অভিভাবক ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে।বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫(ক) ধারায় উল্লেখ আছে, অনূর্ধ্ব ২৭ বছর বয়সী বাংলাদেশের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে কোনো ছাত্র বা ছাত্রী ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্য হতে পারবেন। কিন্তু ২০১১ সালের ১০-১১ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে (কাউন্সিল) সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল অনূর্ধ্ব ২৯ বছর। এ সময় ওয়ান-ইলেভেনের কারণে ছাত্রলীগের প্রধান অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পদপ্রার্থীদের বয়স দুই বছর বাড়ানো হয়।আগামী ২৫-২৬ জুলাই ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের ২৮তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ৮ মে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ছাত্রলীগের একটি পক্ষের দাবি, কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার দিন (৮ মে ২০১৫) পর্যন্ত যাদের বয়স ২৯ বছর হয়েছে তারাই প্রার্থী হতে পারবেন। কিন্তু অন্য একটি পক্ষ বলছে, কাউন্সিল অনুষ্ঠানের দিন (২৫ জুলাই ২০১৫) পর্যন্ত যাদের বয়স ২৯ বছর হবে তারাই কেবল প্রার্থী হতে পারবেন। এদিকে সংগঠনটির গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ দুই বছর বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বর্তমান কমিটির মেয়াদ চার বছর হতে চলছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্সিল না হওয়ায় বর্তমান কমিটির অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই সামনের কাউন্সিলে প্রার্থী হতে পারছেন না। কমিটির সহ-সভাপতি, যুগ্ম-সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক পদের সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ছিটকে পড়েছেন। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তাই বয়স বাড়ানোর মাধ্যমে অভিজ্ঞদের নেতৃত্বে আনার দাবি ছাত্রলীগের এ অংশটির। অন্যদিকে ছাত্রলীগের অন্য অংশটি মনে করছে, বয়স বাড়ালে সংগঠনে অছাত্ররাই নেতৃত্বে আসবেন। ফলে ছাত্রদলের মতো অছাত্রদের দিয়ে সংগঠন পরিচালনার অপবাদ আসতে পারে স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী এই ছাত্র সংগঠনে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রার্থীদের বয়সসীমা এখন পর্যন্ত ২৭ বছরই আছে। এটি বাড়তেও পারে আবার না-ও বাড়তে পারে। তবে ছাত্রলীগের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে বয়স এক বছর, দুই বছর কিংবা তার বেশিও বাড়াতে পারেন। বয়সসীমা কত হবে- জানতে চাইলে সিদ্দিকী নাজমুল আলমের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, গঠনতন্ত্রই আমাদের মূলভিত্তি। এর বাইরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে যা ইচ্ছা করতে পারেন। আশা করি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাউন্সিলে প্রার্থিতার বয়স নিয়ে ধূম্রজাল
ফরহাদ উদ্দীন
2290 মোট পাঠক সংখ্যা 1 আজকের পাঠক সংখ্যা