|| তিনবার পেছানোর পর বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যার মামলার পুনর্বিচার কার্যক্রম মঙ্গলবার ভারতের কুচবিহারের বিএসএফ সেক্টর সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টে পুনরায় শুরু হবে।
বিচার কার্যক্রম বারবার পেছানোতে হতাশ হলেও অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের সাজা হবে-এমনটি প্রত্যাশা ফেলানীর স্বজন এবং এলাকাবাসীর। আর কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকনের আশা, আসামীর সাজার মধ্য দিয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরার সময় ১৪ বছর বয়সী কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ। তার লাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে ছিল ৫ ঘণ্টা। এই শোকাবহ ঘটনা আজও ভুলতে পারেনি ফেলানীর গ্রামের বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারীর অধিবাসী এবং তার স্বজনরা। তারা চান ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার।
গ্রামবাসীরা জানান, ফেলানীকে বিএসএফ হত্যা করেছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা দ্রুত এর ন্যায় বিচার চাই।
নিহত ফেলানীর ছোট বোন মালেকা খাতুন বলেন, ‘ফেলানী আমার বড় বোন, তার সঙ্গে একসঙ্গে চলাফেরা করতাম। তার কথা খুব মনে পড়ে ও কষ্ট হয়। আমার বোনের হত্যাকারীর যেন বিচার হয়।’
হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ৪ বছর পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে দু’বার ভারতের কুচবিহারে গিয়ে বিএসএফের কোর্টে সাক্ষী দিয়েছেন ফেলানীর বাবা। তাই ন্যায় বিচারের আশায় তাকিয়ে আছেন তার বাবা-মা।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘অমিয় ঘোষ আমার মেয়েকে মারছে। এ পর্যন্ত আমি তার কোনো বিচার পাইনি। বিগত ৪ বছর শুধু অপেক্ষাই করে গেছি। এবার আশা করি আমার মেয়ের হত্যার ন্যায় বিচার পাবো এবং অমিয় ঘোষের শাস্তি হবে।’
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের ন্যায় বিচারের জন্য বিগত ৪ বছর শুধু চোখের পানি ফেলেছি। এ পর্যন্ত কোনো ন্যায় বিচার পাইনি। জানি না আমার মেয়ের ন্যায় বিচার পাবো কি না।’
এদিকে, ফেলানীর বাবা বিএসএফের কোর্টে সাক্ষ্য দেয়ার সময় দু’বারই তার সাথে গিয়েছিলেন কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন। তার আশা এই সেশনে বিচার শেষ হবে এবং আসামীর সাজার মধ্য দিয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘আমরা এবং ভারতীয় আদালতও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করছে। আমরা আশা করি, আসামীর সাজার মধ্য দিয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে।’
২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কুচবিহারে বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যকে নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেন ওই কোর্ট। ফেলানীর বাবা ও মা এই রায় প্রত্যাখ্যান করলে ১৩ সেপ্টেম্বর মামলাটি পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসএফ কর্তৃপক্ষ।