শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া

রাজনীতি ইতিবাচক ধারায় না ফিরলে ক্ষতি বড় দু’দলেরই

যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: বাংলাদেশে চলছে দোষারোপের রাজনীতি। কোন একটি বড় ঘটনা ঘটলে এক দল আরেক দলকে দোষারোপ করেছে। ফলে মূল অপরাধীরা চলে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অনেক সময় নিরাপরাধ ব্যক্তির ওপর দায় চাপিয়ে পার পেয়ে যায় মূল আসামি। ২১শে আগষ্ট  গ্রেনেড হামলায় আসামি জজ মিয়াই এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দুই বিদেশি হত্যায় চাপের মুখে আছে দুই দলই। দুই বিদেশি হত্যার প্রকৃত অপরাধী ধরা না পড়লে বিদেশিদের কাছে জবাবদিহিতা আরো বেড়ে যাবে।

এর প্রভাব বাংলাদেশের অনেক কিছুর উপরই পড়তে পারে বলে মনে করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ন হলে বেকায়দায় পড়বে বড় দুই দল। কারণ তারাই বেশিরবাগ সময় দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। একারণে জবাবদিহিতা তারেই করতে হবে। দুই বিদেশি খুনের পর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পোশাক বিক্রেতা এইচঅ্যান্ডএম ইনডিটেক্স এবং গ্যাপের নির্বাহীদের চলতি মাসে ঢাকা সফর বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ শিল্পের সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা হয়ে আগরতলা-কলকাতা সরাসরি যে বাস বুধবার থেকে চালাবে বলে ঠিক করেছিল ত্রিপুরা সরকার, তা স্থগিত রাখা হয়েছে। ত্রিপুরা সরকারের এক অফিসার ওই বাসের পারমিট আনতে ঢাকায় গেলে তার ওপরে এক বেসরকারি পরিবহন সংস্থার কর্মীরা হামলা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে যদিও ভারতীয় দূতাবাসের হস্তক্ষেপে নতুন পারমিট দেয়া হয়, কিন্তু ত্রিপুরার সরকার পরিসেবা শুরুর আগে বাস এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাইছে। বিবিসি বাংলা বুধবার এ খবর জানায়।

৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশেগুলো প্রথম থেকেই বলে আসছে নির্বাচন সুষ্ঠ হয়নি। যেখানে অর্ধেকের বেশি আসনে নির্বাচিত হয়েছেন বিনা ভোটে। আর একারণেই  যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ বলেছেন  ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু হয় নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় নি।  অর্ধেকেরও বেশি আসনে প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি তার ১৮ দলীয়  রাজনৈতিক জোট নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা  ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৬টিতে।

তবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা প্রশ্নে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর মনোভাবের মধ্যে পার্থক্যও অনেকটা স্পষ্ট। বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইতালি, নেদারল্যান্ডসহ ১২টি দেশ সতর্কতা জারি করেছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে এসব দেশ। তবে চীন, রাশিয়া এবং ভারতের মতো শক্তিগুলো এ পথে হাঁটেনি। দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার তদন্তে রাশিয়া এবং ভারতের গোয়েন্দাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নেয়ার কথা বলেছেন সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক ধরনের ছায়া দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাবশালী শক্তিগুলো এলার্ট জারি করে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করছে বলেই মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। এ ধরনের চাপ প্রয়োগ গ্রহণযোগ্য নয় বলে সরকারের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি বিবৃতি দিয়েই বলেছে। সরকারের অনেকেই এর ভেতরে ষড়যন্ত্র দেখছেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এরই মধ্যে সরকারের তরফে ব্রিফ করা হয়েছে কূটনীতিকদের। প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা আলাদা করে কথাও বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে।

সর্বশেষ সতর্কতা প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে তাদেরকে। তবে এতে এখন পর্যন্ত বরফ গলার আভাস পাওয়া যায়নি। দুটি বিষয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে পশ্চিমা কয়েকটি দেশের। ১. বাংলাদেশে আইএস’র অস্তিত্ব রয়েছে কি-না এ ব্যাপারে নিবিড় অনুসন্ধান দেখতে চান তারা। ২. সরকার যেভাবে তদন্তের আগেই বিএনপি-জামায়াতকে দোষারোপ করছে তাও ভালভাবে নিচ্ছেন না একদল কূটনীতিক। দুই বিদেশী হত্যাকান্ডের ঘটনায় পশ্চিমাদের চাপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে সরকার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মন্ত্রীদেরও সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

দুই বিদেশী হত্যাকা- বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী শিবিরের জন্যও চাপ হয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা এ হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী করে চলেছেন বিএনপিকে। এমনকি সরাসরি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেও দায়ী করা হয়েছে। দুটি হত্যাকান্ডের পর নতুন উদ্যমে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। জাপানি নাগরিক হত্যায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবীন-উন-নবী খান সোহেলের ভাই।

প্রতিদিনই সহিংসতার নানা মামলায় সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পুলিশি অভিযানে। বিভিন্নস্থানে সম্মেলনের সময় দলটির নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন। একটি মামলায় জামিন পেলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে আরেকটি মামলায়। এমনিতেই গত নয় বছর ধরে টানা দুঃসময় কাটাচ্ছে বিএনপি। এ অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর দলটির মধ্যে এক ধরনের চ্যাঞ্চল্য তৈরি করেছিল।

যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে, চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডন গেছেন। তবে সবাই জানতেন, যুক্তরাজ্য সফরে দল পুনর্গঠন নিয়ে তিনি কথা বলবেন, তার ছেলে এবং দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গেও তার বৈঠকের কথা ছিল। বিএনপি চেয়ারপারসনের দেশে ফেরার জন্য অনেকটাই আটকে আছে দল পুনর্গঠনের কার্যক্রম। এখন সরকার থেকে নতুন করে চাপ প্রয়োগের ফলে এ কার্যক্রম কতটা কিভাবে এগোয় সেদিকে দৃষ্টি রাখছেন পর্যবেক্ষকরা। এছাড়া, জোটে জামায়াতসহ কয়েকটি ইসলামপন্থী দল থাকায় ‘জঙ্গি’ ইস্যুটি সবসময়ই বিএনপির জন্য স্পর্শকাতর। আমাদের সময়

Print
1989 মোট পাঠক সংখ্যা 1 আজকের পাঠক সংখ্যা

About jexpress

Close