যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যার মূল হোতা কামরুল ইসলামকে নিয়ে সিলেট পৌঁছেছে পুলিশ। গত ৮ জুলাই এই সিলেটেই শিশু সামিউল আলম রাজনকে ভ্যান চুরির অপবাদ দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে তাকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। পরে সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কামরুল আহসান। তিনি জানান, এখন থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেকোন সময়ে আদালতে হাজির করা হবে কামরুলকে।
গত ১৬ আগস্ট রাজন হত্যায় ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে পুলিশ যে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে তাকে কামরুলকে পলাতক দেখানো হয়। অবশ্য কামরুল তখন সৌদি পুলিশের জিম্মায় ছিল। আদালতে হাজির করে এই মামলায় পুলিশ এখন কামরুলকে গ্রেপ্তার দেখাবে। তবে কামরুলের ভা্ই শামীম আহমদ এবং হত্যাকাণ্ডের আরেক হোতা পাভেল এখনো পলাতক রয়েছেন। এরআগে দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০৪০ বিমানে কামরুলকে নিয়ে ঢাকা পৌঁছান তিন পুলিশ কর্মকর্তা। রাজনকে হত্যার পর সৌদি আরব পালিয়ে গিয়ে সেখানে প্রবাসীদের মাধ্যমে ধরা পড়েন কামরুল। ইতোমধ্যে বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলার বিচারকাজও শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ মামলায় ৩৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে গত ১২ অক্টোবর সৌদি আরব গিয়েছিলেন পুলিশের তিন কর্মকর্তা- পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুল করিম, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশানর রহমত উল্লাহ ও বিমানবন্দর থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আ ফ ম নিজাম উদ্দিন। কামরুলকে নিয়ে দুপুরে ঢাকা পৌঁছানোর পর পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) নজরুল ইসলাম বলেন, যেখানে বন্দিবিনিময় চুক্তি ছিল না সেই আইনগত সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে রাজন হত্যার প্রধান আসামি কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। সৌদির সঙ্গে আমাদের বন্দিবিনিময় চুক্তি নেই, বন্দি আসামিদের যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনা হয়, সেই পথটি আমাদের সামনে খোলা ছিল না। কিন্তু ইন্টারপোলের সহযোগিতার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আমরা তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি। ইন্টারপোলের সব বিষয়ে আমরা কথা বলতে পারি না। কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। তবে ইন্টারপোল এ ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে।
তিনি আরো জানান, সৌদিকে তাকে (কামরুল) ধরার পর একটি কনস্যুলেটে রাখা হয়েছিল। পরে কনস্যুলেট থেকে তাকে জেদ্দার একটি থানায় ও পরে ১২ জুলাই রিয়াদের হাজতে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছে। গত ৮ জুলাই সিলেট নগরীর কুমারগাঁওয়ে শিশু সামিউল আলম রাজনকে ভ্যান চুরির অভিযোগে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। রাজনকে পিটিয়ে হত্যার পর সৌদি আরব পালিয়ে গিয়ে গত ১৩ জুলাই আটক হন কামরুল। কামরুল ছাড়াও রাজন হত্যা মামলার বাকি আসামিরা হলেন- মুহিদ আলম, আলী হায়দার, শামীম আহমদ, পাভেল আহমদ, ময়না চৌকিদার, রুহুল আমিন, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, দুলাল আহমদ, নুর মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আছমত উল্লাহ ও আয়াজ আলী। রাজনকে পেটানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ও গণমাধ্যমগুলো বিষয়টি নিয়ে সরব হলে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়।