যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: রাজধানীর ঢাকাসহ সারাদেশে শুক্রবার ছুটির দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২ জন। এ সময় আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত। ঢাকায় চারজন, যশোরে দু’জন, চট্টগ্রামে তিনজন, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে একজন করে মোট ১২ জন নিহত হয়েছেন।
ঢাকা : রাজধানীতে পৃথক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন— নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার নুরুল হুদার ছেলে আরমান হোসেন (১৮), গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচগাছি গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে নূর আলম (১৭), গৃহবধূ রুনা আক্তার (২৫) ও আব্দুর রহমান (৩৫)। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুন ফারায়েজী দ্জানান, দুপুর সোয়া ১টার দিকে শাহবাগের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের বিপরীত দিকের রাস্তায় বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন আরমান হোসেন। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর পৌনে ২টার দিকে তিনি মারা যান। সবুজবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নয়ন চন্দ্র জানান, ভোরে সোহেল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস গাইবান্ধা থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসছিল। সোয়া ৬টার দিকে খিলগাঁও বাসাবো পৌঁছলে বাসের ছাদ থেকে পড়ে যান নূর আলম। তিনি ওই বাসের হেলপার ছিলেন। তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ২টার দিকে তিনি মারা যান। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নিহত রুনা আক্তারের দুলাভাই রিয়াজ আহমেদ জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে মতিঝিলের এজিবি কলোনির হিন্দুপাড়ার সামনের রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটার সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় রুনা আক্তার গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা ৭টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। রুনা আক্তার প্রোগ্রাম ফর উইমেন ডেভেলপমেন্টের (পিডাব্লিউডি) উচ্চমান সহকারী হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার লুৎফর রহমানের স্ত্রী। রিয়াজ আহমেদ জানান, সন্ধ্যায় রাস্তা দিয়ে ৭-৮টি মোটরসাইকেল রেসলিং খেলার মতো দ্রুতগতিতে চালিয়ে যাচ্ছিল। সেগুলোর একটির ধাক্কায় রুনা আক্তার গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন একটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া রাজধানীর ওয়ারীর কাপ্তানবাজারে শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে বাসের ধাক্কায় আব্দুর রহমান নামে এক যুবক আহত হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মারা যান। আব্দুর রহমান ফকিরাপুলের গরমপানির গলির একটি বাসায় থাকতেন। তার বাবার নাম মন্নাফ আলী। ওয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অহিদুল মিয়া জানান, ঘাতক বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক বা হেলপারকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোজাম্মেল হক জানান, নিহত চারজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
যশোর : যশোর-খুলনা মহাসড়কের সিঙ্গিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় ইনসান আলী হাওলাদার (৫২) এবং তার মেয়ে ফারজানা আক্তার সুমি (১৯) নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে ইনসান আলী তার মেয়েকে নিয়ে মোটরসাইকেলে চেপে খুলনা থেকে যশোরে যাচ্ছিলেন। নিহতদের বাড়ি বরিশাল শহরের পুরাতনপাড়ার তিন নম্বর ওয়ার্ডে। তবে তারা খুলনা শহরে বসবাস করতেন। অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম জানান, ইনসান আলী তার মেয়েকে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে চেপে খুলনা থেকে যশোরের দিকে যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তারা যশোর-খুলনা মহাসড়কের সিঙ্গিয়ায় পৌঁছলে খুলনামুখী একটি ট্রাক তাদের ধাক্কা দেয়। এতে বাবা ও মেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে হাইওয়ে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ ট্রাকসহ হেলপার সোহানকে আটক করেছে।
গাজীপুর : জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় বাসের সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে রবিউল মণ্ডল (৩৫) নামে এক বাসচালক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও তিনজন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর বাইপাস এলাকায় শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রবিউল মণ্ডল নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার হাবীবপুর গ্রামের লতিফ মণ্ডলের ছেলে। গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর জানান, ঢাকা থেকে নওগাঁগামী রকি পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ঢাকাগামী একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাসের চালকসহ চরজন আহত হন। আহত বাসচালক রবিউল সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। পুলিশ বাসটি জব্দ করলেও ট্রাকটি পালিয়ে যায়। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি ওসি হুমায়ুন কবীর।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলায় ট্রাকচাপায় তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে এ দুর্ঘটনায় ঘটে। আহত একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাজাহান জানান, বিকেল পৌনে ৫টায় চার আরোহী মোটরসাইকেলযোগে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক চাপা দিলে তারা গুরুতর আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে দু’জন মারা যান। তারা হলেন— লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ি গ্রামের অছি মিয়ার ছেলে মো. শাকিল (১৭) এবং আবদুল মালেকের ছেলে মো. তানজীর (১৬)। একই এলাকার মোহাম্মাদ আলীর ছেলে মো. সোয়েব (১৬) সন্ধ্যায় মারা যান। তাদের লাশ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে ট্রাকচাপায় সোহেল মিয়া (২৮) নামে এক মোটরসাইকেলচালক নিহত হয়েছেন। সদর উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বেদগ্রাম এলাকার নতুন বাসস্ট্যান্ডের সামনে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সোহেল মিয়া গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পদনারপাড়া গ্রামের সাহেব আলী মিয়ার ছেলে। গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সোহেল মোটরসাইকেলযোগে গোপালগঞ্জে যাচ্ছিলেন। পুলিশ লাইন মোড়ে পৌঁছলে খুলনাগামী একটি ট্রাক তাকে চাপা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোরে মারা যান তিনি।
টাঙ্গাইল : ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নগরজলফৈই বাইপাশে সড়কে যাত্রীবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ যাত্রী। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম ওসমান গনি (৪০)। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার কুনকুনিয়া গ্রামে। এ ছাড়া আহতদের মধ্যে ১৬ জনকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, খাদে পড়া যাত্রীবাহী বাসটি ঢাকা থেকে ছেড়ে সিরাজগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। বিকেলে মহাসড়কের নগরজলফৈ বাইপাস রোডে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাককে সাইড দেওয়ার চেষ্টা করে চালক। এ সময় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই একজন মারা যান। আহত হন অন্তত ২০ যাত্রী।