যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: রামপালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা বাতিল এবং সুন্দরবন রার দাবিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার লংমার্চ মাগুরা পৌঁছালে এতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মাগুরা মোটরশ্রমিক ইউনিয়ন অফিসের সামনের এ ঘটনায় ১০ আন্দোলকারী আহত হয়েছেন। সুন্দরবন অভিমুখী গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার রোডমার্চ যশোরেও পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। রোডমার্চটি যশোর শহরের প্রবেশদ্বার ভাস্কর্যের মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ সেখানে ব্যারিকেড দেয়। রোডমার্চ শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাম মোর্চার লংমার্চের গাড়িবহর মাগুরায় পৌঁছায়। সেখানে বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক, বাম গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী ফ্রন্টের মোসরেফা মিশুর নেতৃত্বে ৫০০-এর বেশি নেতা-কর্মী মহাসড়কে লং মার্চের র্যালি বের করে। এ সময় মাগুরার একদল পুলিশ র্যালিতে বাধা দেন। পুলিশের বাধা উপো করে র্যালিটি মাগুরা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসের সামনে পৌঁছায়। এ সময় পুলিশ র্যালিতে লাঠিচার্জ করে। এতে বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক, ফকরুদ্দিন আজিজসহ ১০ নেতা-কর্মী আহত হন বলে দাবি করেছেন জোনায়েদ সাকি। পরে দুপুর ১২টার দিকে লংমার্চের গাড়িবহন মাগুরা থেকে ঝিনাইদহের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী আসাদুজ্জামান বলেন, পূর্ব অনুমতি ছাড়া হঠাৎ করেই বাম মোর্চার নেতা-কর্মীরা মহসড়কে র্যালি বের করে। এতে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। র্যালিতে থাকা নেতা-কর্মীরা সরকারবিরোধী স্লোগান দিলে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। কোনো লাঠিচার্জ করা হয়নি বলেও দাবি করেন ওসি মুন্সী আসাদুজ্জামান।
সুন্দরবন অভিমুখী গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার রোডমার্চ যশোরেও পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। গতকাল শনিবার দুপুরের পর রোডমার্চটি যশোর শহরের প্রবেশদ্বার ভাস্কর্যের মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ সেখানে ব্যারিকেড দেয়। রোডমার্চ শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। বাধা উপো করে নেতাকর্মীরা মিছিলের চেষ্টা চালালে পুলিশ প্রথমে ধাওয়া করে। এসময় লাঠিচার্জও করা হয়। পরে রোডমার্চটি খুলনার উদ্দেশে রওনা হয়। বামমোর্চার সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক সাইফুল হক অভিযোগ করেন, মাগুরাসহ পথে পথে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। মাগুরায় পুলিশের লাঠিচার্জ করে বাম নেতাকর্মীদের ওপর। পুলিশের সঙ্গে এই হামলায় অংশ সরকারি দলের ক্যাডাররাও। হামলায় তিনি নিজেসহ মোর্চার অন্তত পাঁচজন কর্মী আহত হন।
সাইফুল হক আরও জানান, তাদের দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা ছিল ঝিনাইদহে। কিন্তু সেখানে পুলিশ ও মতাসীনদের বাধায় যেতে ব্যর্থ হওয়ায় স্থানীয় পুলিশের অনুমতি নিয়ে যশোর-খুলনা মহাসড়কের ণিকা পিকনিক স্পটে খাওয়ার আয়োজন করা হয়। কিন্তু যশোর পুলিশ সেখানেও বাধা দেয়। ফলে না খেয়েই চলে যেতে হয় তাদের।
এছাড়া রোডমার্চ যশোর শহরের ওপর দিয়ে খুলনার দিকে যাওয়া ও সমাবেশের কথা থাকলেও পুলিশ তা করতে দেয়নি। বরং জোর করে বাইপাস সড়ক ধরিয়ে দিয়েছে।
সাইফুল হক বলেন, এদেশে আইনের শাসনের নামে একদলীয় স্বৈরশাসন চলছে। সুন্দরবন রা তথা দেশের কোটি কোটি মানুষকে বাঁচানোর জন্য বন-সংলগ্ন রামপালে পরিবেশবিধ্বংসী বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে।
এসময় বামমোর্চার অন্যতম নেতা জুনায়েদ সাকি বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে সরকার তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, ঝিনাইদহ থেকে তারা মূলত পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। পুলিশ তাদের অজানা গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা দাবি করেন, পুলিশ রোডমার্চে কোনো বাধা দেয়নি। বরং রোডমার্চে অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। শহরের মধ্যে ঢুকলে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হতে পারে আশঙ্কায় বাইপাস সড়ক ধরে রোডমার্চটি খুলনার দিকে পাঠানো হয়েছে।