বিএনপি পুনর্গঠন ‘ত্যাগীদের’ ত্যাগ, অর্থ যার পদ তার

যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: দল পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের। কেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করতে বলা হলেও যে সকল নেতাকর্মী বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে মামলা ঘাড়ে নিয়েও সক্রিয় থেকেছেন বা জেলার বাইরে ছিলেন, সেই ‘ত্যাগী’ নেতাদের কমিটি থেকে বাদ দিতে চাপ প্রয়োগ করছেন শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ। আবার পদ-পদবি পেতে জেলা পর্যায়ের অনেক নেতাই অর্থ লেনদেন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে জেলা পর্যায়ে কমিটি নিয়ে জেলা নেতারাই আটকে পড়েছেন মতপার্থক্যের জালে। গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গউছুর আজম ডলার বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে যারা হামলা-মামলার কারণে জেলার বাইরে ছিল তাদের বাদ দিয়েই একটি পক্ষ কমিটি গঠনের কথা বলছে। আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি দিতে কেন্দ্র থেকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে একপক্ষ ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কাউন্সিল করার পক্ষে, অপরপক্ষ তাদের নিয়েই কমিটি গঠনে মতামত দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের মতপার্থক্য দল পুনর্গঠনের কাজে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ তবে তিনি সুনির্দিষ্ট করে কোনো কেন্দ্রীয় নেতার উল্লেখ করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এদিকে কমিটিতে পদ-পদবি পেতে ইতোমধ্যে অনেকেই অর্থ লেনদেন করছেন বলেও অভিযোগ উঠছে জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘দল পুনর্গঠনের নির্দেশনা কেন্দ্র থেকে আসার পরদিনই অনেকে ঢাকায় টাকা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। যারা বিগত আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন না, তারাই এ কাজ করছে। আগামী দিনের নেতৃত্ব নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এগুলো চোখে দেখার পর কাউন্সিল নিয়েও আমাদের কোনো আগ্রহ নেই।’

তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মীই বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ভুল করেছেন। এতে ত্যাগী নেতারা দল থেকে বাদ পড়ে যাবেন। আর এই সুযোগ লুফে নিচ্ছে দলের কিছু সুবিধাবাদী নেতা।  এরা দল নয়, নিজেদের বড় করে দেখেন। দলের বিপদে আড়ালে থাকেন। অপরদিকে, নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত দল পুনর্গঠনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বগুড়া জেলা বিএনপি। বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন বাংলামেইলকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে যেসব জেলায় কমিটি দেওয়া হয়েছে, সেসব কমিটিকে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ‘পকেট কমিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

এই ব্যাপারে জয়নাল আবেদীন চাঁন বলেন, ‘দল পুনর্গঠনের কাজ এখনও আমরা শুরু করতে পারিনি। মামলার ভারে আদালতে দৌড়াদৌড়ি করতেই সময় চলে যাচ্ছে। তাই দল পুনর্গঠনের কাজে মনোনিবেশ করতে পারছি না। তবে খুব দ্রুতই জেলা, উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেছেন, দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতেই সারাদেশে সরকার ত্রাস সৃষ্টি করছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করছে। প্রসঙ্গত, গত ৯ আগস্ট সংগঠনকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে বিএনপির পক্ষ থেকে ৬৫টি জেলায় চিঠি পাঠানো হয়। এতে স্বাক্ষর করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান। চিঠিতে সারাদেশের থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিল করে নতুন নেতৃত্ব আনতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় নিদের্শনা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কমিটি গঠন করতে পারেনি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

কয়েকটি জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশে থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিল করতে চিঠি দেওয়া হলেও এগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য কেন্দ্র থেকে কোনো কমিটি এখনও গঠন করা হয়নি। তবে মাঝে মাঝে শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতা যোগাযোগ করেন। এই বিষয়ে খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। কারণ কেন্দ্র থেকে যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে দল পুনর্গঠন করা সম্ভব নয়। কিন্তু এরপরও আমরা কমিটি গঠনের কাজ করে যাচ্ছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য আরও সময় লাগবে।’ ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. তৈমুর রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে। অল্প সময়ে কমিটি গঠন সম্ভব নয়। আমরা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথেও কথা বলেছি। তিনি আমাদের সাথে একমত পোষণ করেছেন।’ এদিকে দল পুনর্গঠন প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে সরকার দল পুনর্গঠনে বাধা সৃষ্টি করছে। ক্ষমতাসীনরা বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্যই এই ষড়যন্ত্র করছে।

Print
1526 মোট পাঠক সংখ্যা 1 আজকের পাঠক সংখ্যা

About jexpress

Close