যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে এবং আর্মি রেগুলেশন লঙ্ঘন করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েছিল। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধান আবার সেনাপ্রধান ছিলেন। জিয়া যা কিছু করেছে তার সবকিছু ছিল অবৈধ। মহামান্য আদালত এ ব্যাপারে রায় দিয়েছেন। ক্ষমতায় গিয়ে জিয়া যে দল গঠন করেছে সেটাকেও অবৈধ হিসেবে গণ্য করা দরকার।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওনার দিলে পেয়ারে পাকিস্তান। তাই তো তিনি সেই সুরেই কথা বলেন। ওনার কত বড় দুঃসাহস, তিনি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে বিতর্ক করেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর যৌথবাহিনীর কাছে সোহরাওয়ার্দী ময়দানে পাক হানাদাররা আত্মসমর্পন করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেন অপূর্ণ ছিল। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেই সেই স্বাধীনতা পূর্ণ হয়।’
তিনি বলেন, ‘এ দেশে যার যার ধর্ম যে স্বাধীনভাবে পালন করবে। সব ধর্মের মানুষের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা আমরা নিশ্চিত করেছি।’ খালেদা জিয়ার জ্বালা-পড়াও রাজনীতি জনগন প্রত্যাখান করেছে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের পৌরসভায় ফলাফল কিংবা ভোটে প্রমাণিত হয়েছে তারা জ্বালা-পোড়াও রাজনীতি গ্রহণ করে নাই। খালেদা জিয়া কেন ভোট নিয়ে কথা বলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন প্রধানমন্ত্রী।’ খালেদাকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি ভুলে গেছেন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের কথা। তিনি সে সময় মানুষের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় গিয়েছিল। কিন্তু দেশের জনগণ তাকে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে দেয়নি। মাত্র দেড় মাসের মাত্রায় তিনি ক্ষমতায় থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ নাকি আওয়ামী লীগ সরকারই ঘটিয়েছে। আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করেছি। আমরা কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে যাব। তার কাছে আমার প্রশ্ন, বিডিআর বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল সকাল নয়টায়, তিনি কেন ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে সকাল সাতটায় বেরিয়ে গেলেন। তার ছেলে লন্ডন থেকে কেন ৪৫ বার ফোন করে তাকে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছেন। এতেই বোঝা যায়, বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এ ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এ ঘটনার বিচার করছি। ষড়যন্ত্রের রহস্য উদঘাটন করা হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মেট্রোরেল নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা ইচ্ছা করেই একটি স্টেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখেছি। যাতে উত্তরা, মিরপুরে থাকা বিভিন্ন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারে। এ মেট্রোরেলের মাধ্যমে বারডেম, বাংলা একাডেমীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যাতে অল্প সময়ে কর্মস্থলে আসতে পারবে আবার ফিরে যেতেও পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ মেট্রোরেল আধুনিক প্রযুক্তিতে করা হয়। এটা চলে আকাশ পথে। যেখানে যেখানে এর সাউন্ডপ্রুফ দরকার তা করা হবে। কিন্তু দেখছি এর বিরুদ্ধে হঠাৎ একেকজন আন্দোলন নেমে গেছে। গ্রাম এলাকায় একটা কথা আছে, যার জন্য করি চুরি, সেই বলে চোর। হঠাৎ এ আন্দোলন কিসের জন্য? আসলে এ দেশে এক শ্রেণির মানুষ আছে, যাই করতে যাবেন তারা সবকিছুতে ‘কিন্তু’ খুঁজে আন্দোলনে নামে।’
ক্লাস বন্ধ করে ‘সম্মান’ আদায় শিক্ষকদের মানায় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষকদের ১২৩ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করেছি। তারপর ওনারা আন্দোলন করছে। মানুষ পেটের ক্ষুদা মিটে গেলে সম্মান বা ‘প্রেসটিজ’ নিয়ে ভাবেন। আসলে বাঙালি কোনো কিছুতে খুশি হন না। ক্লাস বন্ধ করে শিক্ষকরা আন্দোলন করবে এটা কেমন কথা। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে আন্দোলন করলে ছাত্র-ছাত্রীরা সেটা মেনে নেবে না। আমরা তো বলেছি আপনারদের (শিক্ষক) দাবির ব্যপারটি আমরা সমাধান করার চেষ্ঠা করবো। তারপরও কেন ক্লাস বন্ধ করেছেন।’
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনাদের যদি সচিব হতে ইচ্ছে করে তাহলে শিক্ষকতা ছেড়ে পিএসিতে (সরকারি কর্ম কমিশন) পরীক্ষা দিতে যান। কোন দাবি ছাড়াই আপনাদের চাকরির বয়স ৬৫ করেছি। আপনারা কি চান আপনাদের বয়স আবার ৫৯ এ নামিয়ে আনি। আপনারা ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস বন্ধ করতে পারেন না। তাদের লেখাপড়ার ক্ষতি আপনারা করতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ করে সম্মান আদায় শিক্ষকদের মানায় না।’
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার দুপুর আড়াইটায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং চার ধর্মীয়গ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুর ৩টা ২০ মিনিটের দিকে সভার সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে উপস্থিত হলে স্লোগানে স্লোগানে তাকে স্বাগত জানানো হয়। দুপুর ১২টার পর থেকে নেতাকর্মীরা দলে দলে জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেন।