যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: বান্দরবানে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে দর্শনীয় স্থানগুলো। প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে ঈদের আনন্দে ভিড় জমিয়েছেন দেশী-বিদেশী পর্যটকেরা। নীলাচল, নীলগিরি ও চিম্বুক সড়কের পাহাড়গুলোতে মেঘের আনাগোনা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
দর্শনীয় স্থানগুলোতে সোমবারও পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। কোথাও তিলধারণের ঠাঁই নেই। পর্যটন স্পটগুলো মুখরিত হয়ে উঠেছে পর্যটকদের পদচারণায়। মুহূর্তেই নীলগিরি, নীলাচল এবং চিম্বুক পাহাড়ে মেঘ এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে পর্যটকদের। হঠাৎ পাহাড়গুলোতে নেমে আসছে ঝুম বৃষ্টি।
কুমিল্লা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক সোহেল ইসলাম, সাইফুল ইসলামসহ গ্রুপের সদস্যরা বলেন, ‘বাংলাদেশে এত সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় স্থান আছে জানা ছিল না। বান্দরবানে বেড়াতে এসে ধারণাই পাল্টে গেছে। এখানে পাহাড়ের সৌন্দর্য, মেঘ ভেসে যাওয়ার দৃশ্য এবং ঝরনার স্বচ্ছ পানিতে গা ভিজাতে পেরে আমরা সত্যিই মুগ্ধ।’
তবে থাকার হোটেলগুলো ও ট্যুরিস্ট গাড়িগুলোর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকরা। এদিকে, জেলা শহরের হোটেল-মোটেল, রেস্টহাউস এবং গেস্টহাউসগুলোতে সিট খালি না পেয়ে পর্যটকরা এখন ছুটছেন দুর্গমাঞ্চলের পাহাড়ি গ্রামগুলোতে। পাহাড়িদের মাচাং ঘরগুলোকে থাকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন বেড়াতে আসা পর্যটকরা। পাহাড়িরাও অর্থের ভিত্তিতে থাকা-খাওয়া ও টুরিস্ট গাইড হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
পালকি গেস্ট হাউসের ম্যানেজার সাইফুল মিটু বলেন, ‘ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে আমাদের গেস্ট হাউসের কোনো রুম খালি নেই। জেলা শহরের অন্য হোটেলগুলোর অবস্থাও একই রকম। পর্যটকের বাড়তি চাপ আরও কয়েক দিন থাকবে। তবে ৩০ তারিখের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে পর্যটকদের ঢল নামে বান্দরবানে। পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় বান্দরবানে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে ছুটে আসছেন তারা। পাহাড় থেকে ঝরে পড়া ঝরনা, প্রাকৃতিক লেক, ঝুলন্ত সেতু ও সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গসহ অসংখ্য পাহাড়। কি নেই এখানে। পর্যটকের মন ভোলানোর সব আয়োজন রয়েছে বান্দরবানে। জেলা সদরের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে লেকের উপর নির্মিত আকর্ষণীয় দুটি ঝুলন্ত সেতু, মিনি সাফারি পার্ক ও চিড়িয়াখানা ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের টাওয়ারে উঠলে দেখা মেলে পাহাড়ের সমুদ্রের। যেন পাহাড়ের সঙ্গে আকাশ মিতালি গড়েছে নীলাচলে। বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক পাহাড় ও সেনানিয়ন্ত্রিত স্বপ্নীল নীলগিরি পর্যটন স্পটে গিয়ে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। অসংখ্য পাহাড়ের মাঝখানে নির্মিত নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্র যেন মেঘে ভাসছে। মুহূর্তে মেঘ এসে এখানে ছুঁয়ে যাচ্ছে কটেজগুলো।
জেলা শহরের অদূরে অবস্থিত শৈলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানি পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ঝরনা স্রোতধারা বয়ে চলেছে অবিরাম ধারায়। পাশে বসেই পাহাড়ী তরুণীরা কোমর তাঁতে তৈরি কাপড় ও স্থানীয়দের বাগানে উৎপাদিত দেশি হরেক রকমের ফল বিক্রি করছেন। এ ছাড়াও জেলা সদরের বালাঘাটায় নির্মিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নামে পরিচিত বৌদ্ধধাতু স্বর্ণমন্দির জেলায় পর্যটনের ক্ষেত্রে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এ ছাড়াও রুমা উপজেলায় অবস্থিত রিজুক ঝরনা, চিংড়ি ঝরনা, রহস্যময় কিংবদন্তি বগালেক এবং সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ক্যাওক্রাড়াডং, তাজিংডং বিজয়সহ দর্শনীয় বহু স্থান।
অপরদিকে থানছি উপজেলার রেমাক্রী জলপ্রপাত, নাফাকুম ঝরনা, তীন্দু বড়পাথর, বাদুর গুহাসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। আর পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা সাঙ্গু নদী পথে নৌকা নিয়ে নৌ-ভ্রমণ তো সত্যিই বড়ই রোমাঞ্চকর। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী জানান, পর্যটনসমৃদ্ধ জেলা হিসেবে বান্দরবানের খ্যাতি ছড়িয়েছে এখন বিদেশেও। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এটি। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে নতুন নতুন দর্শনীয় স্থানের সংখ্যা আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। ঈদের আনন্দে বান্দরবানে পর্যটকদের বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার শতভাগ সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপদ ভ্রমণের স্বার্থে প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।