যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: ঋতুর পালা বদলে বাংলার প্রকৃতিতে এখন শীতকাল। দিনের আলো মিলিয়ে যেতে না যেতেই শীত এসে জেঁকে বসে চারপাশে। হাড় কনকনে শীতে পরিপূর্ণ উষ্ণতা পেতে অন্যান্য শীত পোশাকের মতই মাফলার একটি অতি প্রয়োজনীয় পরিধান। বাজারেও রয়েছে নিত্যনতুন মাফলারের সমাহার। যেকোনো পোশাকের সঙ্গে স্টাইলিশ মাফলার এখন তরুণদের ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ। জিন্স, টি-শার্ট, ফতুয়া কিংবা শার্টের সঙ্গে চমৎকারভাবে মানিয়ে যায় এটি। নগরীর ফ্যাশন হাউজ থেকে শুরু করে ফুটপাতেও মিলবে দৃষ্টি নন্দন এসব মাফলার।
তরুণ–তরুণী শুধু নয়, যেকোনো বয়সের মানুষের শীত নিবারণে মাফলার নিত্য সঙ্গী। ফ্যাশন হাউজ থেকে শুরু করে শহরের অভিজাত মার্কেট গুলোতে মিলবে বিভিন্ন নান্দনিক মাফলার। উলের নেট মাফলার, এন্ডি কটন, পশমি মাফলারসহ নানা রকম চেক মাফলার পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এছাড়া ব্লকের সঙ্গে হাতের কাজের মাফলারও পাওয়া যাচ্ছে বুটিক শপ গুলোতে। বাজারে লং এবং শর্ট দু’ রকম মাফলার পাওয়া যায়। মেয়েদের মাফলারগুলো একটু শর্ট হয়। তবে কিছু মাফলার ছেলেমেয়ে উভয়ে ব্যবহার করতে পারবেন—সেভাবেই তৈরি করা হয়।
উলের নেট নকশার মধ্যেও পাওয়া যায় বিভিন্ন মাফলার। মাফলারের মধ্যে হাতে বোনা এবং চিকন উলের বিভিন্ন চেক মাফলার পাবেন ১০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। দেশি মাফলারগুলো পাবেন ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া স্টাইলিশ মাফলার পাবেন ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। এই মাফলার গুলো বেশিরভাগ আসে চায়না, ব্যাংককসহ বিভিন্ন দেশ থেকে।
আমাদের দেশে মাফলারের প্রচলন যদিও বহু আগে থেকেই, তবে তার ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল শুধু পুরুষের মধ্যে। আধুনিক সময়ে বদলে গেছে সে ধ্যান-ধারণা। বৈচিত্র্যময় ডিজাইন আর বাহারি রঙের মাফলারগুলো এখন শোভা পাচ্ছে ছেলেমেয়ে উভয়ের গলায়। দেশে সাধারণত দুই ধরনের মাফলারের ব্যবহার দেখা যায় সুতি ও উলের তৈরি। দুটি কাপড়ের ওপরই রঙ ও বৈচিত্র্যময় নকশা ছাপা যোগ করা হয়েছে এবার। সুতির মাফলারগুলো ফুল, লতাপাতা, জ্যামিতিক নকশা প্রিন্টে বেশ জমকালো করে তৈরি করা হয়েছে। লাল-কালো, কমলা-সবুজ, টিয়া-সাদা, বেগুনি-গোলাপি, সাদা-কালোর মিশেলের মাফলারগুলো বেশ পছন্দ হবে আপনার। তাই পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নিন আপনার গলার বন্ধনিটি।
নিউমার্কেটের টোকিও ফ্যাশনে বিক্রি হচ্ছে চায়না ইন্ডিয়ান ও বাংলাদেশী বিভিন্ন ধরনের মাফলার। আরও আছে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যান্ডের মাফলার। জানতে চাইলে দোকানের মালিক মো. শাহেদ বাংলামেইলকে বলেন, আমাদের এখানে বিক্রি হচ্ছে স্টেপ মাফলার, একরঙা ও ব্র্যান্ডের মাফলার। চায়না, ইন্ডিয়ান, বাংলাদেশী মাফলার বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা দামের মধ্যে। এছাড়া ব্যান্ডের মাফলার সেনি, রিবোক, কুমা, নাইফ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা দামের মধ্যে।
তিনি বলেন, নারী-পুরুষদের ব্যবহার উপযোগী এই মাফলার গুলো দৈনিক ২০ থেকে ২৫ টা বিক্রি হচ্ছে। তবে শীত বেড়ে গেলে বিক্রি আরও বেড়ে যাবে।
ব্র্যান্ডপ্রেমিরা বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ ও অভিজাত মার্কেট গুলো থেকে মাফলার কিনতে অভ্যস্থ হলেও গরীব মানুষেরা রাস্তার পাশের ফুটপাত থেকে কিনে নেন তাদের শীতের গলাবন্ধনীটি। গুলিস্থানের পীর ইয়েমেনি মার্কেটের সামনের ফুটপাতে ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে চায়না ও দেশী মাফলার বিক্রি করছেন মো. রিয়াজউদ্দিন। মাফলার বিক্রেতা জানান, এখন প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ টা মাফলার বিক্রি হয়। শীত বাড়লে বিক্রি কিছুটা বাড়বে।
গুলিস্থানের ফুটপাতে আগে মানিব্যাগ বিক্রি করলেও এখন বার্মিজ মাফলার বিক্রি করে আ. রহিম। মাফলার গুলোর মধ্যে রুইতন ২০০ টাকা, সেলী ১০০ এবং টিসু মাফলার বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দামে। দৈনিক কয়টা মাফলার বিক্রি হয় জানতে চাইলে বিক্রেতা রহিম বলেন, শীতই নেই। এখন বিক্রি করি দৈনিক ১০ থেকে ১২ টা মাফলার। ঠাণ্ডা বেড়ে গেলে দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ মাফলার বিক্রি হয়। তিনি বলেন, আগে শীতে সবাই মাফলার ব্যবহার করতো। এখন অনেকে মাফলার ব্যবহার ঝামেলা মনে করে। তাই বিক্রি কম।
এদিকে সমস্ত শরীরে মাফলার ঝুলিয়ে বলতে গেলে নিজেকে মাফলারের হ্যাংগার বানিয়ে হেঁটে হেঁটে মাফলার বিক্রি করছেন ভ্রাম্যমান বিক্রেতা মো. জুয়েল মিয়া। অন্যসময় ফুটপাতে চা বিক্রয় করলেও এখন চায়ের দোকান বন্ধ রেখেই এভাবে ঢাকার অলি গলি ঘুরে বেড়ান তিনি। জুয়েল বলেন, প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে ২০ টার মতো মাফলার বিক্রি করি। লাভ ভালো তাই চায়ের দোকান বন্ধ রেখেই কিছুদিনের জন্য এ ব্যবসা করছি।
ফুটপাতের একজন মাফলার ক্রেতা মো. আরিফ বলেন, প্রতিবছর শীত এলেই নতুন মাফলার কিনি। প্রতি শীতে একই মাফলার ব্যবহার করতে ইচ্ছে করে না। তাই মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে এ বছরও একটা মাফলার কিনেছি। আশা করি এক মাফলারে শীত পার করতে পারবো।