যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: হাওয়া ভবনের তৎকালীন কর্মচারী শামসুজ্জোহা ফরহাদের বিরুদ্ধে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অবৈধ অর্থদাতা বলে অভিযোগে উঠেছে। আর এই অর্থদাতার অবৈধ অর্থ অর্জনের অনুসন্ধানের শুরুতেই তার ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন তারেক রহমানের ছত্রছায়ায় শামসুজ্জোহা ফরহাদ শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। আর তিনিই হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে তারেক রহমানের কাছে নিয়মিত অর্থ পাঠাচ্ছেন বলে দুদকে অভিযোগে আসে। আর তাই অনুসন্ধানের শুরুতেই গতকাল বুধবার সন্ধ্যার দিকে ফরহাদ ও তার স্ত্রী রোজিনা জোহার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের (বিশেষ) কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধানী কর্মকর্তা।’
অভিযোগটির অনুসন্ধানী কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ এ বিষয়ে বলেন, ‘গতকাল তার (শামসুজ্জোহা ফরহাদ) ও স্ত্রীর দেশত্যাগের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।’ দুদকে আসা অভিযোগে বলা আছে, শামসুজ্জোহা ফরহাদ বর্তমানে মিরপুরের রূপনগরে একটি ছয় তলা বাড়িতে থাকেন। ফরহাদ ১৯৯৪ সালে তারেক রহমানের মামা প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের মালিকানাধীন মার্শাল ডিস্টিলারিতে কাজ করেন। সে সুবাদে তারেক রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। বিএনপি জোট সরকারের আমলে তাকে হাওয়া ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে খুবই অল্প বেতনে হাওয়া ভবনে চাকরি করতেন। পরে ড্যান্ডি ডাইংয়ে কাজ করার সুবাদে তারেক রহমানের সংস্পর্শে আসেন ফরহাদ। আর এতেই রাতারাতি বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স, এফডিআরসহ নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যান তিনি।
অভিযোগে বলা আছে, হাওয়া ভবনের ওই কর্মচারী তারেক রহমানের টাকায় কোটিপতি হয়েছেন। শামসুজ্জোহার সব অর্থই মূলত তারেক রহমানের দেয়া। বর্তমানে তার উপার্জন থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েই তারেক রহমান লন্ডনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। এ জন্য দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। নিজের অবৈধ সম্পদ নিরাপদ রাখতে অফিসের একজন সাধারণ কর্মীর নামে সম্পদ রেখেছেন তারেক রহমান।
এভাবে শামসুজ্জোহা রাজধানীর ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, রূপনগর, পূর্বাচলসহ আরো কয়েকটি এলাকায় ফরহাদের নামে ৬ থেকে ৭টি বাড়ি, ৯ থেকে ১০টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে। হাওয়া ভবনের অল্প বেতনের কর্মচারী ফরহাদের নামে এসব সম্পদ কেনা হয়েছে সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের সময়। সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থও জমা আছে। রয়েছে অনেকগুলো মেয়াদি আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট)। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুরে আছে রাইস মিল, মৎস্য খামার, ইটের ভাটা। এছাড়া মিঠাপুকুরে কেনা হয়েছে প্রচুর জমি। ওইসব সম্পদ থেকে তারেক রহমানকে নিয়মিত টাকা পাঠান তিনি।
সূত্র জানায়, দুদকে আসা এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে শামসুজ্জোহা ফরহাদের সম্পদ এবং তারেক রহমানকে অর্থ পাঠানোর অভিযোগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এজন্য বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ ও তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দুদকের অনুসন্ধানের শুরুতেই ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে তারেক রহমানের কাছে অর্থ পাঠানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি ফরহাদের নামে রাখা ফ্ল্যাট, বাড়ি, ব্যাংক হিসাব, মেয়াদি আমানতসহ অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের দলিলপত্র ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর এ জন্যই তার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা অর্থ পাচার মামলার বিচারে আদালত তাকে বেকসুর খালাস দেন। তবে একই মামলার আসামি তারেক রহমানের ব্যবসায়ী বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছর কারাদণ্ড এবং ৪০ কোটি টাকা জরিমানা করেন। যদিও আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক।
এদিকে এ রায়ের পর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। যার অনুসন্ধান করছেন উপপরিচালক মো. হারুনুর রশিদ। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চেরিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও ছিলেন উপপরিচালক মো. হারুনুর রশিদ।