যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: আর্থিক লেনদেন, পারিবারিক কলহ অথবা কু প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার জেরে পাঁচ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে তাদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পেলেই তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হবে। আর বড়দের হত্যা করার সময় দেখে ফেলায় খুন হতে হয়েছে দুই শিশু শান্ত ও সুমাইয়াকে, এমনটাই ধারণা করছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মামলার এজাহারে শফিকুল বলেছেন, তার স্ত্রী তাছলিমার সঙ্গে ঢাকার কলাবাগানের বাসিন্দা নাজমা বেগম ও শাহজাহান নামের দুই ব্যক্তির আর্থিক লেনদেন ছিল। এদের কাছ থেকে তার স্ত্রী দশ থেকে বারো লাখ টাকা ঋণ করেছে।দীর্ঘদিন ধরে এ টাকা আনলেও সে টাকা ফেরত দেয়নি তার স্ত্রী। এ নিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে উল্লেখিতদের বিরোধ চলছিল। তারা বেশ কয়েকবার তাছলিমাকে হুমকিও দিয়েছিল। এ বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
এ ছাড়া শফিকুলের ছোট ভাই শরিফের স্ত্রী লামিয়াকে তাদের ভাগিনা মাহফুজ কু-প্রস্তাব দিয়েছিল। লামিয়া বিষয়টি বাসায় জানিয়ে দিলে মাহফুজকে পারিবারিকভাবে শাস্তি দেওয়া হয়। এর জেরেও এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে সে সন্দেহ পোষন করে। এজাহারে উল্লেখিত আসামিদের মধ্যে একমাত্র মাহফুজকে পুলিশ হেফাজতে রেখেছে।
এদিকে নিহত তাছলিমার খালা রমিজা খাতুন জানান, গত পনের দিন আগে নিহত মোরশেদের কারখানার শ্রমিক ও সম্পর্কে শফিকুলের ভাগিনা মাহফুজ তাছলিমাদের ভাড়া বাসায় আসে। সেখানে লামিয়াকে একা পেয়ে তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। বিষয়টি পরিবারকে জানানো হলে লামিয়ার জা তাছলিমা বেগম ক্ষুব্ধ হয়ে মাহফুজকে জুতাপেটা করে। এর জেরে বেশ কিছুদিন ধরে লামিয়াকে শাসিয়ে আসছিল মাহফুজ।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি হোসিয়ারি কারখানা থেকে রোববার আরো চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। এর আগে আরো দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোট ছয়জনকে আটক করা হল।আটককৃতরা হলেন- শফিকুলের খালাতো ভাই দেলোয়ার হোসেন, ভাগিনা মাহফুজ ও শাহাদাৎ এবং খুন হওয়া মোরশেদের হোসিয়ারি কারখানার সহকর্মী শ্রমিক রাসেল, নয়ন, নজিবুল ও সাইফুল।
যে বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে সে বাড়ি( ১৩৩/১ ডিপি রোড) মালিক ইসমাইল মিয়া জানান, তাছলিমার ভাই মোরশেদের কারখানার এক শ্রমিক তার মাকে নিয়ে শনিবার বিকেলের দিকে এই বাড়িতে আসে। বাসায় এসে ফ্ল্যাটে তালা দেওয়া দেখে বাড়িওয়ালাকে বিষয়টি জানায়। বাড়িওয়ালা তাদেরকে কালিরবাজার থেকে তালা কাটার মিস্ত্রী ডেকে আনার পরামর্শ দেয়।
কিন্তু তারা বাড়িওয়ালার কথা না শুনে ওই শ্রমিকের সঙ্গে আরো কয়েকজন মিলে নিজেরাই তালা কাটা শুরু করে। পরে ভেতরে ঢুকে মৃতদেহ দেখে চিৎকার শুরু করে। আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে বাড়িওয়ালাও আসেন। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর ওবায়দুল্লাহর ছেলে এসে বিষয়টি পুলিশকে জানায়। কিন্তু যারা তালা কেটেছিল পরে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এদিকে পাঁচজনকে হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনার পেছনে নিহত তাছলিমার আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি প্রধান কারণ বলে ধারণা করছেন তার স্বামী শফিকুল। তিনি জানান, তার স্ত্রী রাজধানীর কলাবাগান এলাকার নাজমা, সোহরাব ও বাবুসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে দশ থেকে বারো লাখ টাকা এনেছিল। সেই টাকা ফেরত না দেওয়ায় পাওনাদাররা বেশ কয়েকবার তাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। এ কারণে তাছলিমা মোবাইল ফোনের সিম পরিবর্তন করে ফেলে। তাছলিমার কাছ থেকেই তিনি এ বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন। পাওনাদারদের হুমকির কারণে তাছলিমা কলাবাগান থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে আত্মগোপনে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে তাছলিমা এসব টাকা দিয়ে সুদের ব্যবসা করত।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন জানান, এ হত্যাকাণ্ড তদন্তে পুলিশ আর্থিক লেনদেন, নারী ঘটিত বিষয় ও পারিবারিক কলহ- এ তিনটি বিষয়কে বেশি প্রাধান্য দিয়ে এগোচ্ছে। তদন্তে আরো ছোটখাট কয়েকটি বিষয়কে মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে তাদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পেলেই তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হবে। এ ছাড়া নিরীহ কাউকে এ মামলায় হয়রানি করা হবে না। পুলিশ দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা ও হত্যার রহস্য উন্মোচন করবে। এদিকে পাঁচ খুন মামলার তদন্তের ভার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মালেক।