যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামো মধুমতি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ কারণে কোথাও গুচ্ছগ্রামে, কোথাও স্থানীয় ব্যক্তিদের বাড়ির উঠান বা বারান্দায়, কোথাও বা ছাপড়াঘর তুলে বা খোলা জায়গায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। ফলে, এ রকম পরিবেশে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কোটাকোল ইউনিয়নের ঘাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মধুমতি নদীর ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। যে কোন মুহূর্তে বিদ্যালয় দু’টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। নদীতে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়গুলো হলো লোহাগড়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া, শালনগর ইউনিয়নের নওখোলা, আজমপুর ও শিয়রবর এবং কোটাকোল ইউনিয়নের টি-করগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত দুই বছরে এ বিদ্যালয়গুলো নদীতে বিলীন হলেও নানা দুর্ভোগের মধ্যে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হচ্ছে। বিগত বছরের আগস্ট মাসে তেঁতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা পাকা ভবন, মাঠ, টয়লেট ও নলকূপ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় নদীর পাড়ে ছাপড়াঘর তুলে সেখানেই শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। প্রায় দুইশ’ শিক্ষার্থীকে ওই ছাপড়াঘরে বসানোর জায়গায় না থাকায় কখনো কখনো নদীর পাড়ে খোলা জায়গায় ক্লাস নেওয়া হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে ওই ছাপড়া ঘরে চারজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। আবার কখনো বসার জায়গায় না থাকলে শিক্ষার্থীদের ছাপড়ার বাইরে নিয়ে দাঁড় করিয়ে বা বসিয়ে পড়াচ্ছেন।
এ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নদী, এহসান, সুমাইয়া, রিতু ও জান্নাতি জানান, ‘এভাবে বসে বা রোদে দাঁড়িয়ে পড়ালেখা করতে তাদের কষ্ট হয়। এ জন্য তারা পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে না’। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শওকত হোসেন বলেন, ‘ভবন না থাকায় আলমারি, খাতাপত্র, পাঠদান উপকরণ অন্য বাড়িতে রাখা হয়েছে। দ্রুত ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে’। নওখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ও অবকাঠামো ২০১৪ সালের জুলাই মাসে নদীতে বিলীন হয়। তখন থেকেই এ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রাজা মিয়ার বাড়িতে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, একটি ছাপড়া ঘরে গাদাগাদি করে বসিয়েও সব শিক্ষার্থীর জায়গা না হওয়ায় বাড়ির উঠানেও ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সহকারী শিক্ষক সাজেদা খানম বলেন, ‘এভাবে পড়াতে গেলে মনোযোগ নষ্ট হয়। উপকরণ ব্যবহার করা যায় না। বৃষ্টির সময় ঘর দিয়ে পানি পড়ে।’ প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুইটি, তাকিয়া, সুরাইয়া ও সানজিদা জানায়, এখানে পড়ালেখায় অনেক কষ্ট। প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সভাপতি বিদ্যালয় ভবন তৈরির জন্য জমিদান করেছেন, কিন্তু ভবনের খবর নেই’। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ও অন্যসব অবকাঠামো নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে পার্শ্ববর্তী শিয়রবর গুচ্ছগ্রামে। গুচ্ছগ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গুচ্ছগ্রামের কমিউনিটি সেন্টারের ঘরে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। ঘরের মধ্যে একটি শ্রেণির ক্লাস এবং দুই বারান্দায় দুটি শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলছে দুই পালার এ বিদ্যালয়ের ছয়টি শ্রেণির ক্লাস। প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখানকার পরিবেশে শিক্ষার মান কোনোভাবেই ধরে রাখা সম্ভব নয়’। শিয়রবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘২০১৩ সালে নদীতে বিদ্যালয় বিলীন হওয়ার পর এক বছর ধরে শিয়রবর বাজারের গুদামঘরে, তরকারিপট্টির চালার নিচে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। সেগুলোও নদীতে বিলীন হওয়ার পর বর্তমানে শিয়রবর আজিজ- আশরাফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ছাপড়াঘর তুলে কোনোমতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে’। কোটাকোল ইউপির টি-করগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘গত বছর জুলাই মাসে বিদ্যালয় ভবন নদীতে বিলীন হয়েছে। প্রায় তিন শ’ শিক্ষার্থীর ক্লাস নেওয়ার জন্য পাশেই একটি ছোট ঘর তোলা হয়েছে। সেখানে কোনোরকমে পড়াশোনার কার্যক্রম চলছে।’ লোহাগড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর রহমান জানান, ‘বিদ্যালয় বিলীন হওয়ায় সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। সরকারি ভবন নির্মাণের জন্য ৩৩ শতাংশ জমি প্রয়োজন, সেটি যে কোনো ব্যক্তিকে বিদ্যালয়ের নামে দান করতে হবে। তারপরই ভবন হবে। সেক্ষেত্রে শিয়রবর বিদ্যালয়ের জন্য এখানো জমি পাওয়া যায়নি। অন্য বিদ্যালয়গুলোর টিনশেড ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানান’।