যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: ২৫ জানুয়ারি বাংলা সনেটের জনক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯২তম জন্মজয়ন্তী। প্রতিবছরের মত এবারও কবি স্মরণে তার বাস্তুভিটা যশোরের কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ীতে মধুমেলার আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ২২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এ মেলা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ মেলা চলবে সাতদিন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতায় মারা যান মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। এরপর কবির ভাইয়ের মেয়ে কবি মানকুমারী বসু ১৮৯০ সালে কবির প্রথম স্মরণসভার আয়োজন করেন সাগরদাড়ীতে। সেই আয়োজন থেকে শুরু হয় মধুমেলার। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় যশোর জেলা প্রশাসন সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার আয়োজন করেছে। এ লক্ষ্যে পুরোদমে চলছে প্রস্তুতির কাজ। বিশেষ করে মধুমেলায় উন্মুক্ত যাত্রা, সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী, বিচিত্রা অনুষ্ঠান, মৃত্যুকূপ, নাগরদোলাসহ বিনোদনের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
মেলা বাস্তবায়নকারী কেশবপুর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মানিক হোসেন বলেন, ‘মেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে প্রায় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় সাধারণ মানুষের বিনোদনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’ সাগরদাঁড়ীর এই মেলা সারাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় তাদের লক্ষ্য। ইতোমধ্যে, মেলা উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খুলনার কয়রা এবং গোপালগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী আল আমিন ও মামুন মেখ জানান, তারা ৮-১০ বছর ধরে মধুমেলায় স্টল দেন। তারা সাধারণত চশমা, ঘড়ি, কসমেটিকস ইত্যাদি বিক্রি করেন। গতবার তাদের ব্যবসা ভাল হয়েছিল। আশা করা যায়, এবারও ভাল ব্যবসা হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
মেলাকে ঘিরে উৎসব আমেজের সৃষ্টি হয়েছে কেশবপুর ও তার আশপাশের এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ দত্ত, উৎপল ঘোষ গৌতম, আব্দুল জব্বার জানান, অনেকেই যারা ঈদ বা পুজো-পার্বণে আসতে পারেন না, তারা অধীর আগ্রহে থাকেন এই মেলার জন্যে। শুধু মধুমেলাস্থল নয়, কেশবপুর ও তার আশপাশের এলাকার বাড়িঘরেও উৎসব লাগে। জামাই-মেয়েরাও আসে তাদের বাবারবাড়িতে। সর্বত্রই উৎসবের আমেজ থাকে। মধুমেলাকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি জানান, প্রস্তুতি প্রায় শেষপর্যায়ে। ইতোমধ্যে ঢাকা ও কলকাতার অতিথিদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ মেলা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। মেলা মঞ্চসহ আশপাশের এলাকায় ২৪ টি সিি ক্যামেরা স্থাপন এবং দুটি জায়গা থেকে তা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া গাড়ি চেকিংয়ের জন্যে দুটি আর্চ ওয়ের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কথা হয়েছে।’ মূলত মহাকবির জন্মদিন ২৫ জানুয়ারি সাগরদাঁড়ীতে মধুমেলার আয়োজন করা হয়। তবে এসএসসি পরীক্ষার কারণে গত বছরের ন্যায় এবারও মেলা আয়োজনের সময় এগিয়ে এনেছে প্রশাসন।