‘বুকভরা আশা’ ভঙ্গ করলেন সোহেল তাজ!

যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের সুযোগ্য পুত্র ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজের রাজনীতিতে না ফেরার ঘোষণায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তার ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীরা। তারা বলছেন, এতে তাদের আশাভঙ্গ হলো। সোহেল তাজের মতো একজন ‘স্বচ্ছ’ রাজনীতিকের অভাববোধ করছে তরুণ প্রজন্ম।
দেশে ফেরার পর ২৩ জানুয়ারি রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যান সোহেল তাজ। দীর্ঘ বিরতির পর তাজকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে বুকে টেনে নেন ‘মমতাময়ী’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় দুই বোন সিমিন হোসেন রিমি ও মাহজাবিন আহমেদ মিমিও তার সঙ্গে ছিলেন।

পরে শেখ হাসিনার সঙ্গে সোহেল তাজের আবেগঘন সাক্ষাতের ছবি ‘ব্রাদার অ্যান্ড সিস্টার রিইউনিয়ন’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেন মিমি। এই ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকসহ গণমাধ্যমগুলোয়। সব ‘অভিমান’ ভুলে সোহেল তাজ আবার রাজনীতিতে ফিরে আসবেন, এমন আশা প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দেন হাজারও তরুণ-তরুণী। কিন্তু পরদিনই সোমবার সে আশা ভঙ্গ হয় অসংখ্য মানুষের। ফেসবুকে দুটি স্ট্যাটাসে সোহেল তাজ সাফ জানিয়ে দেন, রাজনীতি ফেরার ইচ্ছে নেই তার। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম আমার আবার রাজনীতিতে ফেরার বিষয়ে যে সংবাদ প্রচার করছে তা একেবারেই মিথ্যা।’
‘তাজউদ্দিন আহমেদ ও সাইয়েদা জোহরা তাজউদ্দিন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’-এর যাত্রা শুরুর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

দৃঢ়চেতা সোহেল তাজ বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে আমার বাবার সমগ্র জীবন উৎসর্গ করা অর্থাৎ দেশের জন্য এত বড় স্বার্থ ত্যাগের যে আদর্শ সেই আদর্শে বিশ্বাসী ছিলাম, আছি এবং থাকব।’ সোহেল তাজের রাজনীতি না ফেরার ঘোষণায় আশাহত হয়ে প্রাণতোষ দাস ছোটন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অনেক কষ্ট পেলাম। বার বার বলব ফিরে আসুন। দেখিয়ে দিন রাজনীতিতে সব খারাপ লোক নয়। ভালো মানুষও আছে। জনগণের সমর্থন কখনো বিমুখ করবেন না। এখন ৪০% তরুণ এবং যুবক মোট জনসংখ্যার। ওদের কিছুটা হলেও উপলব্ধিটা বুঝুন।’

প্রাণতোষের ওই স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেন স্বপ্না রানি বিশ্বাস। লেখেন, ‘মনটা বিক্ষিপ্ত লাগছে। বুকভরা আশা ভঙ্গ হলে যা হয়।’
কামরুজ্জামান ফারুক লিখেছেন, ‘খুব করে চেয়েছিলাম তিনি ফিরে আসুক। বাট তিনি ফিরবেন না। আশাহত হয়েছি।’
ফেসবুকজুড়ে সোহেল তাজের বন্দনা। তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছে তরুণ প্রজন্ম। স্বচ্ছ, সত্যবাদী, আপসহীন নেতা উল্লেখ করে তারা সোহেলের রাজনীতিতে না ফেরার সংবাদকে ‘বেদনার’ বলে মত দিয়েছেন। শাহনাজ লিজা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সোহেল তাজ লোকটি আ.লীগের বাকি সব নেতাদের মতো না। এটা ভাবতে ভালো লাগে যে উনি কখনো অন্যায়ের সাথে আপোস করেননি। তবে আমাদের এই দেশে এরকম মানুষের কদর নাই বললেই চলে। তবে রাজনীতি ছেড়ে ভালো কাজই করেছেন। আমরা একজন গুণী, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী, বুদ্ধিদীপ্ত নেতাকে হারালাম।’ সোহেল তাজকে ‘পছন্দের নেতা’ উল্লেখ করে কেউ কেউ লিখেছেন, ‘আমরা দেশে এমন একজন লিডার চাই যিনি সামনে থেকে আমাদের নেতৃত্ব দেবেন।’

নোবেল ইমতিয়াজ লিখেছেন, ‘সোহের তাজের মতো স্বচ্ছ রাজনীতিক লোকের প্রয়োজন বাংলাদেশে।’ তবে অনেকে বাংলাদেশের রাজনীতিকে ‘নোংরা’ আখ্যা দিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, সোহেল তাজের মতো মানুষের মূল্য এ দেশে নেই। দেশের রাজনীতির প্রতিই বীতশ্রদ্ধ অনেকে। এসএমএইচ তৌহিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সোহেল তাজের মতো পরিছন্ন মানুষ… বাংলাদেশের এসব নোংরা রাজনীতিতে না আসাটাই ভাল বলে আমি মনে করি।’ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ চারদলীয় জোট সরকার আমলে রাজপথে আন্দোলনে সক্রিয় থেকে অনেকের নজর কাড়েন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে সোহেল তাজ বিপুলভাবে বিজয় অর্জন করেন। সেসময় গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসন থেকে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় সোহেল তাজকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করা হয়। এর পাঁচ মাসের মাথায় ২০০৯ সালেই তিনি পদত্যাগ করেন। ওই বছর ৩১ মে তিনি পদত্যাগ করে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন। কিন্তু তখন তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন বছর পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি চিঠি দেন তিনি। পাশাপাশি তিনি পদত্যাগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারিরও আবেদন জানান। সেই সময় থেকে তার ব্যক্তিগত হিসাবে পাঠানো বেতন-ভাতার যাবতীয় অর্থ ফেরত নেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয় ওই চিঠিতে। ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন সোহেল তাজ। তার সংসদীয় এলাকা গাজীপুরের কাপাসিয়ার সংসদ সদস্য এখন তার বোন সিমিন হোসেন রিমি।

Print
1516 মোট পাঠক সংখ্যা 3 আজকের পাঠক সংখ্যা

About admin

Close