যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: দিন যতো গড়াচ্ছে ততই হাতছানি দিচ্ছে বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। বেগম খালেদা জিয়া যতদিন সুস্থ এবং বেঁচে থাকবেন ততদিন বিনা প্রতিদিœ¦তায় তিনিই চেয়ারপারসন নির্বাচিত হবেন- নেতাকর্মী ও সমর্থকদের এমনটাই বিশ্বাস। তবে দলের মহাসচিব কে হচ্ছেন তা নিয়ে সর্বত্র কৌতুহল রয়েছে। এ পদে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম তরিকুল ইসলাম। অন্যরা রয়েছেন কৌশলী অবস্থানে।
২০১১ সালে বিএনপির দুঃসময়ের কাণ্ডারিখ্যাত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আসন্ন কাউন্সিলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হবেন এমনটাই আশা করেছেন বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান। তবে এ পদটিকে ঘিরে বেশ গুঞ্জণ চলছে বিএনপিতে। স্থায়ী কমিটির সদস্য এম তরিকুল ইসলাম, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ মহাসচিব পদে আলোচনায় রয়েছে। মহাসচিব পদে জেষ্ঠ্য নেতাদের নাম আলোচনায় থাকায় বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তার বিশ্বাস খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার ত্যাগ মূল্যায়ন করবেন।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্ধারণ যে প্রক্রিয়ায় হোক না কেন সাধারণত খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার শুরু থেকে এ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জেষ্ঠ্য নেতাদের অসহযোগিতা পাচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত থাকাকালীন তার নামে ৮৪টি মামলা হয়েছে। ৩৫টি মামলায় চার্জশিট গ্রহণ হয়েছে। কারাবরণ করতে হয়েছে ৭ দফা। স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন, সুবক্তা রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যেখানে তার উপর দলের নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক সমর্থন থাকার কথা সেখানে মহাসচিব পদটিকে ঘিরে এতো গুঞ্জন কেন?
দলের অনেকেই বলছেন, কাউন্সিলে গুরুত্বপূর্ণ পদকে ঘিরে নেতাদের উৎসাহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আলোচনায় নাম আসা মানে এই নয় যে তিনি সেই পদ পেয়ে যাচ্ছেন। আলোচনায় নাম থাকাটাও নেতাদের এক ধরণের তৃপ্তির খোরাক। সংশ্লিষ্ট একাধিক মহলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির মহাসচিব পদে মূল প্রতিদ্বন্দী হচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং এম তরিকুল ইসলাম। একদিকে মর্যাদার প্রশ্নে যে কোনো মূল্যে পদটি রক্ষা করতে চায় ফখরুল। অন্যদিকে আত্মমর্যাদা রক্ষায় এ পদ থেকে দূরে রয়েছেন তরিকুল। বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির মহাসচিব পদে এই মুহূর্তে প্রয়াত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের যোগ্য উত্তরসুরি দরকার। বিএনপির মহাসচিব পদে যিনি হবেন তাকে সব দিক দিয়ে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হতে হবে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে যেসব জ্যেষ্ঠ নেতা বিরোধীতা করেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারেননি। জেষ্ঠ্য নেতাদের সঙ্গে কনিষ্ঠ নেতারাও মির্জা ফখরুল ইসলামের প্রতিদ্বন্দী হয়েছেন। এর মাধ্যমে মির্জা আলমগীরের সাংগঠনিক সক্ষমতা ফুটে উঠেছে। এছাড়াও ফখরুলের আত্মগোপন কৌশল নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রবল সমালোচনা রয়েছে।
অনেকেই এম তরিকুল ইসলামকে প্রয়াত খোন্দকার দেলোয়ারের যোগ্য উত্তরসুরি মনে করেন। সার্বিক মাপকাঠিতে মহাসচিব পদে তরিকুল ইসলামই উপযুক্ত। তবে এ পদ ঘিরে তরিকুল ইসলামের পুরানো অভিমান এখনো বিদ্যামান। ১৯৮৭ সালে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাকে তখন পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করা হয়নি। সেই অপমান বোধ থেকে এ পদ নিয়ে তিনি কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। নিয়মিত কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকলেও কৌশলে অসুস্থতার কথা বলে অনুসারিদের তিনি দমিয়ে রেখেছেন। তবে বেগম খালেদা জিয়া আর তারেক রহমান আন্তরিকভাবে চাইলে তরিকুল ইসলামই হবেন বিএনপির পরবর্তী মহাসচিব-এমনই মত বিএনপির অনেকের। তবে এ ক্ষেত্রে ফখরুলকে ভারমুক্ত করার আগে তরিকুলকে ভারমুক্ত এবং অভিমানমুক্ত করা জরুরি মনে করছেন তারা। বলা হচ্ছে, তরিকুলকে মহাসচিব হিসেবে সবাই মেনে নেবেন, তিনিও মানিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু অন্য কেউ মহাসচিব হলে সেক্ষেত্রে নেতাদের ঐক্য ঝুঁকিতে থাকবে। আবার কারো কারো মতে পরিবর্তিত রাজনীতিতে আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরী বিএনপির মহাসচিব পদে উপযুক্ত। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য মনে করেন, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ প্রচণ্ড পড়াশুনা করেন। তাই জুনিয়রদের মধ্য থেকে রুহুল কবির রিজভীই মহাসচিব পদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আব্দুল্লাহ আল নোমানের অনুসারীদের আশাবাদ রাজনৈতিক দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে মহাসচিব পদে নোমানের বিকল্প নেই। মহাসচিব পদ নিয়ে আগ্রহ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করেছেন তিনিই ভারমুক্ত হবেন এটাই স্বাভাবিক। আমি দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের সদস্য। আমার মহাসচিব পদ নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। তবে দায়িত্ব দিলে আপত্তি নেই।’