যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: বনিবনা না হওয়ায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ। জিএম কাদের ও এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার ইস্যুতে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত এরশাদের সব সাংগঠনিক কর্মসূচিই বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাবেক এ ফার্স্টলেডি।
জানা গেছে, রোববার বেলা ১১টায় রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সভা ডেকেছেন এরশাদ। তিনি নিজেই ফোন করে সবাইকে সভায় উপস্থিত হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু এরশাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না স্ত্রী রওশন ও তার ঘনিষ্ঠ নেতারা। শেষ পর্যন্ত তারা দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই সভা বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সূত্র জানায়, এরশাদের প্রেসিডিয়াম সভা নিয়ে শনিবার রাতে গুলশানের বাসায় বিরোধীদলীয় নেতা রওশন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এসময় বিরোধী চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম, কাজী ফিরোজ রশীদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জিএম কাদের ও নতুন মহাসচিব ইস্যুতে মত পরিবর্তন না করলে এরশাদের সাংগঠনিক সব কর্মসূচিই বয়কট করা হবে। এরশাদের উপর চাপ তৈরি করতে বিরোধীনেতা ও তার ঘনিষ্ঠ নেতারা এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিরোধীনেতার ঘনিষ্ঠ ও দলের প্রভাবশালী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, জিএম কাদের ও নতুন মহাসচিব ইস্যু থেকে সরে না আসা পর্যন্ত ম্যাডামের নেতৃত্বে আমরা পার্টির চেয়ারম্যানের কর্মসূচি বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কারণে আমরা এরশাদের প্রেসিডিয়াম সভায় যাচ্ছি না।
এদিকে রওশনপন্থি প্রেসিডিয়াম সদস্যদেরও বৈঠকে উপস্থিত হতে এরশাদের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ও এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদারকে নতুন মহাসচিব করার পর দলের নীতিনির্ধারণী সভাটি এরশাদের জন্য মর্যাদার ইস্যু। এরশাদ চাইছেন, যেকোনো মূল্যে অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্যকে আজকের সভায় হাজির করতে। অন্যদিকে রওশনপন্থিরা চাইছেন এরশাদের সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্যরা যেন না যান, কর্মসূচি যেন ফ্লপ হয়। সব কিছু মিলিয়ে জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে দলের চেয়ারম্যান এরশাদ ও বিরোধীনেতা রওশনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বিরোধীনেতা রওশনের বিরোধিতার মুখে দলের নীতিনির্ধারণী সভায় এই প্রথম কো-চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদের ও নতুন মহাসচিব হিসেবে এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদারের অভিষেক হচ্ছে। দুজনের দায়িত্ব পাওয়াকে কেন্দ্র করে এরশাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। বিরোধিতার জের ধরেই আজকের প্রেসিডিয়াম সভায় যাচেছন না বিরোধীদলের এই নেতা।
সম্প্রতি রংপুর সফরে গিয়ে এরশাদ তার ছোট ভাই জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন।পরের দিন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে সরিয়ে নতুন মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা দেন এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদারকে। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি রওশন এরশাদ। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন এরশাদ ও রওশন। সাবেক এ ফার্স্টলেডি এরশাদের সিদ্ধান্ত গঠনতান্ত্রিক নয় উল্লেখ করে তা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান। এরশাদও চিঠি দিয়ে তাকে জানিয়ে দেন এই সিদ্ধান্ত গঠনতান্ত্রিক এবং পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।
এক পর্যায়ে রওশনের বিরোধিতার মুখে দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও নতুন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদারকে নিয়েই সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এরশাদ। এ অবস্থায় রোববার ডাকা হয়েছে দলের সর্বোচ্চ ফোরামের এই সভা। আজ রোববার বেলা ১১টায় এরশাদের বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই সভা। সভায় দলের চেয়ারম্যান এরশাদের সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে।