মানবপাচার রোধে হচ্ছে না ট্রাইব্যুনাল

যশোর এক্সপ্রেস ডেস্ক: মানবপাচার রোধে আপাতত আলাদা কোনো ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে না। আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিস্বস্ত সূত্রে এ কথা জানা গেছে। দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে সাতটি ‘মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবে আদালত গঠনে পদ সৃষ্টি এবং অর্থ বরাদ্দের কথাও বলা হয়। জবাবে এসবের প্রয়োজন নেই বলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবটি ফেরৎ পাঠানো হয়। বলা হয়, অর্থের সঙ্কট রয়েছে এবং সামনে বাজেটের কথাও উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ফেরত পাঠানো হয়েছে।’ তিনি আবারো প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন বলে জানান। অর্থ মন্ত্রণালয় কেন প্রস্তাবটি ফেরৎ পাঠালো? এর জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘টাকা-পয়সা নেই বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া সামনে নতুন বাজেট আসছে তাই বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২-এর বিধান অনুয়ায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠনে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে এ প্রস্তাব পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ডের কথা বলা হয়।

আইনে বলা হয়, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে প্রতারণার মাধ্যমে, অসৎ উদ্দেশে এবং বাধ্যতামূলক শ্রম বা কোনো শোষণ বা নিপীড়নমূলক পরিস্থিতির শিকার হইতে পারে মর্মে জানা থাকা সত্বেও অন্যকোনো ব্যক্তিকে কাজ বা চাকরির উদ্দেশ্যে গমন, অভিবাসন বা বহির্গমন করিতে প্রলুব্ধ বা সহায়তা করে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির উক্ত কর্ম “মানবপাচার”র অন্তর্ভুক্ত হইবে।’ মানবপাচার রোধে প্রস্তাবিত ট্রাইব্যুনাল গঠন সম্পর্কে আইনমন্ত্রী ইতিপূর্বে বলেছিলেন, ‘সাত বিভাগে সাতটি ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়া পর্যন্ত আপাতত এ সংক্রান্ত মামলাগুলো জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে।’ তখন তিনি জানিয়েছিলেন, এ সম্পর্কিত ৫৫৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৭টি মামলার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। বিচার হয়েছে মাত্র ১২টির।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে পাচারকারীদের কিছুসংখ্যক ক্যাম্প এবং অভিবাসীদের গণকবরের সন্ধ্যান পাওয়া যায়। এতে চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে। এছাড়া সাগরে অনেক মানুষকে ভাসমান অবস্থায় দেখা যায়। এরপর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া ভাসমান মানুষদের আশ্রয় দিতে সম্মত হয়। তখন জাতিসংঘ জানিয়েছিল ভাসমান মানুষের সংখ্যা আড়াই হাজারের মতো। এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশের টেকনাফ দিয়ে ট্রলারযোগে মানবপাচারের খবর গণমাধ্যমে চলে আসে। এমনকি পাচারের প্রস্ততিকালেও অনেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। পানিপথে পাচারকৃত মানুষের কষ্টের করুন কাহিনী পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়। ফলে দেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মূলত এসব প্রেক্ষাপটেই মানবপাচার রোধে আইন মন্ত্রণালয় এ সম্পর্কিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নেয়। যা অর্থ মন্ত্রণালয় নাকচ করে দিল। তবে এখনই হাল ছাড়ছেন না আইনমন্ত্রী। প্রস্তাবটি আবারো অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

Print
1987 মোট পাঠক সংখ্যা 1 আজকের পাঠক সংখ্যা

About admin

Close