এক্সপ্রেস ডেস্ক: ‘দ্য ডেইলি স্টার’ পত্রিকা বন্ধ ও সম্পাদক মাহফুজ আনামের শাস্তির দাবি করেছেন ঢাকার সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস। দশম সংসদের নবম অধিবেশনে রবিবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান। শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমরা মনে করি সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। মাহফুজ আনাম সেই পেশাকে কলঙ্কিত করেছেন। তার সম্পাদক থাকার আর কোনো অধিকার নেই। এই পেশাকে অমর্যাদা করার জন্য তাকে সাংবাদিকতা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। তিনি সাংবাদিকতা যেন না করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’
তাপস বলেন, ‘ট্রান্সকমের মালিক লতিফুর রহমান। তিনি একজন করাপ্ট (দুর্নীতিগ্রস্ত)। আমরা জানি, বাংলাদেশের অনেকেই জানে; সন্ত্রাসীবাহিনী উলফার সঙ্গে তার জড়িত থাকার বিষয়টি। তাদের বিরুদ্ধে আশুপদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমি আপনার (স্পিকার) মাধ্যমে মহান সংসদে বিষয়পটি উত্থাপন করলাম।’ এর আগে, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও মাহফুজ আনামের শাস্তি দাবি করেন। নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বৃহস্পতিবার দেওয়া স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় উল্লেখ করেন, ‘মাহফুজ আনাম, দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক, স্বীকার করেছেন যে, তিনি আমার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অপবাদ আরোপ করতেই তার বিরুদ্ধে মিথ্যা দুর্নীতির গল্প ছাপিয়েছিলেন। তিনি সামরিক স্বৈরশাসনের সমর্থনে আমার মাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে এই কাজ করেছিলেন।’
‘একটি প্রধান সংবাদপত্রের সম্পাদক সামরিক বিদ্রোহে উস্কানি দিতে যে মিথ্যা সাজানো প্রচারণা চালায় তা রাষ্ট্রদ্রোহিতা।’ ‘তিনি অব্যাহতভাবে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে তাদের অনৈতিকতা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার কথা লেখেন। তার নিজের স্বীকারোক্তি মতে, তিনি নিজেই পুরোপুরি অনৈতিক এবং একজন মিথ্যাবাদী। তার অবশ্যই একজন সাংবাদিক হিসেবে থাকার কোনো অধিকার নাই, সম্পাদক তো অনেক দূরের বিষয়। তার কার্যক্রম দুর্নীতিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে; যা দেশপ্রেমহীন এবং বাংলাদেশবিরোধী।’ জয় আরও লেখেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত, তার মিথ্যা গল্পের উস্কানি আমার মাকে গ্রেফতার করিয়েছে এবং ১১ মাস তিনি জেলে কাটিয়েছেন। আমি বিচার চাই। আমি চাই মাহফুজ আনাম আটক হোক এবং তার রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিচার হোক।’
সংবিধানের ধারা তুলে ধরে শেখ ফজলে নূর তাপস সংসদে বলেন, ‘উনার (মাহফুজ আনাম) কার্যক্রম সুনির্দিষ্টভাবে সংবিধানের আর্টিক্যাল ৭ এর উপ-২ এর আওতায় রাষ্ট্রদ্রোহের আওতায় পড়ে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার আওতায় পড়ে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা এনে তার (মাহফুজ আনাম) বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থা করার জন্য মহান সংসদের মাধ্যমে আমি দাবি উত্থাপন করছি।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে আটক করার জন্য যে নীলনকশা ও ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তার (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে যে অবৈধ ও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য মাহফুজ আনাম তার পত্রিকা ডেইলি স্টারে তৎকালীন ডিজিএফআইয়ের দেওয়া মিথ্যা, বানোয়াট ও দুর্নীতিতে সাজানো গল্প ছাপিয়েছিল। মাহফুজ আনাম বলেছেন, ডিজিএফআই যে সকল সংবাদ পাঠাতো,তার সত্যতা যাচাই-বাছাই ছাড়াই ডেইলি স্টারের এডিটর থাকা সত্ত্বেও তিনি সেগুলো কনফার্ম করেননি। সকল মিথ্যা-বানোয়াট ও সাজানো গল্পগুলো অকপটে সেই ডেইলি স্টারে ছাপিয়েছেন।’
তাপস বলেন, ‘এই মিথ্যা গল্প ছাপানোর জন্য আমি মাহফুজ আনামের রেজিগনেশন দাবি করছি। এই পত্রিকা অনতিবিলম্বে বন্ধের দাবি করছি। মাহফুজ আনামের মতো লোকেরা অসাংবিধানিক সরকার কায়েম করা এবং গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য সারাজীবনই ষড়যন্ত্র করে গিয়েছে। এটা আর কোনোভাবে বরদাস্ত করা যায় না।’ আলোচনায় আরও অংশ নেন- সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বলেন, ‘সাংবাদিকতা রাষ্ট্রীয় চতুর্থ স্তম্ভের জায়গায় চলে যাচ্ছে। কিন্তু সেই সময়ে একজন প্রকাশক কিভাবে সাংবাদিকতার নামে কলঙ্ক এবং সাংবাদিকতাকে আজ একটা কলঙ্কময় অধ্যায়ে নামিয়ে এনেছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই কাজগুলো উনি করে যাচ্ছেন। সাংবাদিকতা হবে উইদাউট ফেবার। মানুষ জানে, উনাদের টাকা-পয়সার উৎসটা কোথায়।’ তিনি বলেন, ‘এই ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের সোচ্চার হতে হবে। এরা যাতে আজ কোনো অবস্থায় সাংবাদিকতা পেশায় না থাকতে পারে এবং তারা যেসব অপকর্ম করে তা জাতির সামনে উন্মোচিত করতে হবে।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘মাহফুজ আনাম সাহেব জাতির সামনে স্বীকার করলেন তিনি তার পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছেন। সম্পাদক দায়ী হলে মালিক ও প্রকাশক দায়ী নয়- এটার ভাবার অবকাশ নেই। তারা মূলত বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণ করার জন্য, দেশের সম্ভাবনাকে নসাৎ করার জন্য, গরীব মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারকে ধ্বংস করার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘তারা প্রায়শই আমাদের ছবক দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের খুব আকাঙ্খা, তাদের গাড়িতে পতাকা লাগবে। কিন্তু জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। জনগণ এই সমস্ত ব্যক্তিদের পছন্দ করে না। যদি গাড়িতে পতাকা লাগাতে হয় তাহলে রাজনীতিবিদ হন, মানুষের কাছে যান, সুইপারের সাথে কোলাকোলি করেন, শ্রমিকের শরীরের ঘাম নিজের শরীরে লাগান, শেখ হাসিনা দেশের প্রত্যেকটি এলাকায় ঘুরে বেড়ান।’ আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘তা না করে, এসি রুমে বসে, এসি গাড়িতে চড়ে ওই মিডিয়ার সুযোগ নিয়ে বড় বড় ছবক দেবেন রাতে-দিনে সবসময়। রাজনীতিবিদদের বোকা বানাবার চেষ্টা করবেন, চরিত্র হননের চেষ্টা করবেন। তাহলে রাজনীতির মাঠে এসে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলুন।’
‘মানুষ যদি গ্রহণ করে তাহলে সফল হবেন। কিন্তু আমরা জানি মানুষের সঙ্গে আপনাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ষড়যন্ত্র করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করতে চান? এই পরিকল্পিত মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং কাঠগড়ায় তাদের সমুচিত বিচার করা হোক। যাতে ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের ষড়যন্ত্র করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন’ বলেন তিনি।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নূরজাহান বেগম বলেন, ‘উনি প্রায়ই রাজনীতিবিদদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু তিনি যে কাজটি করেছেন তা সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং এই অনৈতিক কাজ করার জন্য সাংবাদিকতায় থাকারও অধিকার তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। যেহেতু তিনি নিজ মুখে স্বীকার করেছেন। তাই এখান থেকে পেছনে ফেরার কোনো কারণ নেই। তাই তার বিচার দাবি করছি।’ ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম বলেন, ‘এতক্ষণ তো সরকারি দল বললো, আমরা তো স্বতন্ত্র। আমাদেরও তো কিছু বলার অধিকার আছে। কারণ এই ভুক্তভোগী শুধু তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই না, আমিও একজন। খাই নাই, দাই নাই, গেলাস ভাঙার মামলা খাইলাম। বঙ্গবন্ধুর নাতি সজীব ওয়াজেদ জয়ও বিচার জানিয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের কিছু মানুষ আলবদর, রাজকার, আলশামস গঠন করে পাক সেনাদের সহযোগিতা করেছিল। তাই আমার মনে এরাও ওয়ান ইলেভেন সরকারকে সহযোগিতা করেছিল। এজন্যই তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।’ মঈনউদ্দিন খান বাদলবলেন, ‘এটা তো থুক্কু দিয়েই মাফ করা যাবে না। তাহলে তো আলবদর, আলশামস, রাজাকারদেরও মাফ করা যায়। তাই তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।’