এক্সপ্রেস ডেস্ক: বৃহত্তর যশোরের নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও যশোরকে নিয়ে পৃথক প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ঢাকাস্থ বৃহত্তর যশোর সমিতি এবং বিভাগ আন্দোলন পরিষদ। একইসঙ্গে মাগুরাকে যশোর থেকে নিয়ে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত না করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠন দু’টি। বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সুষম উন্নয়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা এবং ফরিদপুরকে পৃথক বিভাগ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু বাংলাদেশের অন্য যে কোন এলাকার চেয়ে যশোরকে বিভাগ ঘোষণার যৌক্তিকতা বেশি। বৃটিশ আমল থেকে যশোর ভৌগলিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
বিভাগীয় অনেক অফিস বর্তমানে যশোরে রয়েছে। এখান থেকে দেশের যে কোন দূরত্বে সহজে যাতায়াত করা যায়। বাংলাদেশের প্রধান পাঁচটি রাজস্ব প্রদানকারী জেলার একটি যশোর যা খুলনা বিভাগে প্রথম। যশোর খাদ্যশস্য, মাছের পোনা, সবজি, খেজুরের গুড়, ফুল ও গাড়ীর যন্ত্রাংশ উৎপাদনে বিখ্যাত। বেনাপোল বন্দর থেকে বছরে ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। নওয়াপাড়া শিল্পনগরী ও নৌবন্দরের মত গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোন রয়েছে এখানে। বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন জেলা এবং ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠর মধ্যে ২ জনই বৃহত্তর যশোরের কৃতি সন্তান। মরমি কবি ফকির লালন শাহ, কবি ফররুখ আহমেদ, মহাকবি মাইকেল মধূসূদন দত্ত, কবি গোলাম মোস্তফা, চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান, ওস্তাদ রবি শঙ্করসহ যশোর অঞ্চলকে করেছেন আলোকিত। সবদিক বিবেচনায় বিভাগ ঘোষণার ক্ষেত্রে যশোর বাংলাদেশের অন্য যে কোন জেলার চেয়ে অগ্রাধিকার দাবি রাখে। কিন্তু তা না করে উল্টো বৃহত্তর যশোরের অঙ্গ হিসেবে পরিচিত মাগুরাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি মহল তৎপরতা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে মাগুরায় সর্বস্তরের মানুষ এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে। বৃহত্তর যশোরের কোটি মানুষের প্রাণের দাবি নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ এবং যশোরকে নিয়ে পৃথক প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণা করা হোক।
লিখিত বক্তব্যে যশোর সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, যশোর জেলা বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও সমগ্র ভারতের মধ্যে প্রথম জেলা। বর্তমান খুলনা বিভাগ এককালে যশোর জেলার মহকুমা বলে পরিচিত ছিল। এই মহকুমা পরবর্তীতে বিভাগের মর্যাদা পেয়েছে। অথচ যশোর এখনো অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। যশোরে ১৮৩৮ সালে জেলা স্কুল, ১৮৫৪ সালে পাবলিক লাইব্রেরি, ১৮৬৮ সালে দেশের প্রথম ইংরেজি প্রত্রিকা প্রকাশ, ১৮৭৫ সালে কেন্দ্রীয় কারাগার, ১৯০১ সালে সদর হাসপাতাল, ১৯৪১ সালে বিমানবন্দর স্থাপন এবং ভারত বিভাগের পর এখানে প্রথম শ্রেণীর সেনানিবাস স্থাপন করা হয়। যশোর বিমানবন্দর বাংলাদেশের একমাত্র বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও যশোর সেনানিবাস দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনা সদস্যের বাসস্থান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মাগুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করার আগে ১৮৪৬ সাল থেকে ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত যশোরের অন্তর্ভূক্ত ছিল। যশোর জেলার সাথে মাগুরার সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। অথচ এখন মাগুরাকে যশোর থেকে পৃথক করার পরিকল্পনা চলছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর যশোর সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন আহমেদ, যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদের আহবায়ক ইঞ্জি. আব্দুস সাত্তার, সদস্য সচিব হাসানূজ্জামান বিপুল, যশোর.ইনফো ওয়েবসাইট সংগঠনের সভাপতি ভবোতোষ মুখার্জী সুবীর, মাগুরা জেলা সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাড. কাজি রেজাউল হোসেন, নড়াইল জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক তালুকদার হুমায়ুন কবির প্রমুখ।