এক্সপ্রেস ডেস্ক: ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ভাষা শহীদদের অমর কীর্তিকে এ মাসের শুরু থেকেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। মাসজুড়ে চলে মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আর এই ভাষার মাসকে কেন্দ্র করে চলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা তাতে দেয় বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের অন্যরকম অনুভূতি। মেলাকে কেন্দ্র করে প্রকাশকরাও প্রকাশ করেন নতুন সব বই। আর নতুন প্রকাশিত এসব বইয়ের সান্নিধ্যে আসতে, সব ভেদাভেদ ভুলে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রাণের মিলনমেলা হয়ে ওঠে বইমেলা। তবে ভাষার মাসে চলা এই মেলা যেন একটু হলেও প্রাণহীন হয়ে পড়ে যখন তাতে না থাকে বাংলা ভাষা নিয়ে রচিত-প্রকাশিত নতুন কোনও বই। এবারের বইমেলা ঘুরে এই বাস্তব চিত্রই দেখা গেছে।
রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসে বইমেলায় গিয়ে দেখা যায়, বাংলা ভাষার ওপর রচিত নতুন বইয়ের সংখ্যা একেবারে শূন্যের কোটায়। বিভিন্ন স্টলে গিয়ে দেখা যায়, বাংলা ভাষার ওপর প্রকাশিত মেলায় আসা সবগুলো বইই পুরনো। কোনও কোনও বই আবার প্রকাশিত হয়েছে ১৯৮৩ সালেরও আগে। এবারের মেলায় ২০তম দিন পর্যন্ত মোট নতুন বই এসেছে দুই হাজার ৩৯৬টি। এর মধ্যে প্রবন্ধ এসেছে ১৩৮টি ও গবেষণার বই এসেছে ২৬টি। তবে এর মধ্যে বাংলা ভাষার ওপর লেখা বই নেই একটিও। প্রকাশকরা বলছেন, ভাষা নিয়ে লেখা বইয়ের ক্রেতা নেই। অ্যাডর্ন প্রকাশনীর প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসাইন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলা ভাষা বিষয়ক বই প্রকাশ করার জন্য আসলে সে রকম পরিবেশ প্রয়োজন। ভাষার বই পড়ার পরিবেশ না থাকলে পাঠকরা কিনবেন না, লেখকরা লিখবেন না, প্রকাশকরাও তা প্রকাশ করবেন না।’ ব্যবহারিক জীবনে ভাষাতত্ত্বের প্রয়োজন না থাকলে সে ধরণের বই প্রকাশের পরিবেশ থাকবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।.
মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে কথা হয় প্রায় ১০ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও পাঠকদের সঙ্গে। কোন ধরণের বই বেশি পড়া হয়, এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজ আদনান বলেন, ‘পরীক্ষা পাসের জন্য একাডেমিক বইগুলোই বেশি পড়া হয়। এর বাইরে সময় পেলে অন্যান্য বই পড়ি। এর মধ্যে উপন্যাসই বেশি পড়া হয়।’ বাংলা ভাষার ইতিহাস কিংবা ভাষা সংক্রান্ত কোনও বই পড়া হয় কিনা- জানতে চাইলে সরকারি চাকরিজীবী রুবাইয়াত তাসনিম বলেন, ‘এ ধরণের কোনও বই কিনে এখনও পড়া হয়নি। তবে ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটি বই পড়া হয়েছে।’ একই ধরণের কথা বলেন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের শিক্ষার্থী হাসনাত সালেহ। তিনি বলেন, ‘ভাষা নিয়ে পড়া বইয়ের মধ্যে শুধু ব্যাকরণ বইটাই পড়া হয়েছে। এছাড়া অন্য কোনও বই পড়িনি।’
এদিকে বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে রচিত বই প্রকাশ করা বিভিন্ন স্টলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবারের মেলায় বাংলা ভাষার ওপর লেখা একটি বই এনেছে মিজান পাবলিশার্স। এছাড়া, প্রথমা প্রকাশন ১টি, মাওলা ব্রাদার্স ১০টি, দিব্য প্রকাশ ১টি, আগামী প্রকাশনী ২টি, অ্যাডর্ন প্রকাশনী ৪টি। তবে সবগুলো বইই বেশ কয়েক বছর আগে প্রকাশিত বলে জানা গেছে। এ বছর বইমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নতুন বইয়ের সংখ্যা ১০৮টি। এর মধ্যে বাংলা ভাষা কেন্দ্রিক বই রয়েছে মাত্র ২টি। ভাষার মাসের বইমেলায় ভাষা নিয়ে বই প্রকাশনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান বলেন, ‘ভাষা নিয়ে বই করলে কেউ কিনতে চায় না। যার কারণেই হয়তো প্রকাশকরা ভাষা সংক্রান্ত নতুন কোনও বই তেমন প্রকাশ করেন না। তবে বাংলা একাডেমি নিয়মিত ভাষার ওপর বই প্রকাশ করে।’