এক্সপ্রেস ডেস্ক: রিজার্ভ চুরির যে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফিলিপাইনের ব্যাংকিং সিস্টেমে ঢুকেছে তা থেকে ‘উদ্ধারযোগ্য’ টাকা বাংলাদেশকে ফেরৎ দিতে দিনক্ষণ নির্ধারণের তাগিদ দিয়েছেন দেশটির সিনেটের চেয়ারম্যান রালফ রেক্টো। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এ টাকা ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে ফিলিপাইন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এ সিনেটর। সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান এক বিবৃতিতে বলেন, দিনক্ষণ ঠিক করতে এজন্য বলছি যে, ওইদিন প্রেসিডেন্ট অ্যাকুইনো ক্ষমতা ছাড়বেন। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার আগে রিজার্ভ চুরির এ টাকা বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন সিনেটর। রালফ রেক্টো বলেন, আদালতের নির্দেশনা না পেলে উদ্ধার হওয়া পুরো টাকা ফিরিয়ে দেয়া যাবে না কিন্তু ৩০ জুনের মধ্যে বেশ কিছু টাকা হস্তান্তর করা যাবে। আইন অনুয়ায়ী, পাচারের টাকা জব্দ করা হলেও আদালতের অনুমোদন ছাড়া তা হস্তান্তরযোগ্য নয়। ব্যাংক জালিয়াতির ইতিহাসে নাড়া দেয়া এ ঘটনা তদন্ত করছে ফিলিপাইন পার্লামেন্টের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি। কমিটির চেয়ারম্যান তিয়োফিসতো গুনগোনার নেতৃত্বে গত দেড় মাসে এ নিয়ে ৬ দফা শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানিতে অভিযুক্তরা সরাসরি দায় স্বীকার না করে পলাতক দুই চীনা নাগরিকের গাও শুহুয়া ও জিজি দিংয়ের ওপর দোষ চাপিয়েছেন। অবশ্য চুরির টাকার হিস্যা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ক্যাসিনো জাংকেট কিম অং। চুরি থেকে পাওয়া টাকার কিছু অংশ ফিরিয়েও দিয়েছেন তিনি। শুনানিতে সিনেট সদস্যরা ক্যাসিনো মালিক, ব্যবসায়ী, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারি প্রতিষ্ঠান ফিলরেম এবং রিজাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তাদের কাছে থাকা টাকা ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে সম্পৃক্ত সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন স্থগিত চেয়ে ফিলিপাইন অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিলের করা মামলা শুনানি শুরুর নির্দেশ দিয়েছে ম্যানিলা রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট। আগামী ২ মে আবেদনের উপর শুনানি শুরু দিনও নির্ধারন করেছেন আদালত। গত ১৮ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন ২০ দিনের জন্য স্থগিত চেয়ে আবেদন জানায় এএমএলসি। শুনানি শেষে আদালত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেনে অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ দেন বিচারক রেনালদো আলহামরা।
আদালতের আদেশে কিম অং, ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজার কোম্পানি, উইলিয়াম গো’র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সেঞ্চুরিটেক্স টেড্রিংয়ের অ্যাকাউন্টের লেনদেনে বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে চীনা নাগরিক গাও শুহুয়ার ফেলে যাওয়া টাকা লেনদেনেও। চীনা এ নাগরিকের রেখে যাওয়া টাকা তার বন্ধু কিম অং ইতোমধ্যে এএমএলসি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছেন। এএমএলসির নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া আবাদ বলেছেন, আদালতের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তিন মাস সময় লাগতে পারে। আবেদনের বিরোধীতা করে আদালতে কোন পক্ষ দাঁড়াবে না। এতে আবেদনের নিস্পত্তি দ্রুত হবে বলে আশা করছেন এএমএলসির নির্বাহি পরিচালক । এছাড়া চুরিতে জড়িত সন্দেহভাজন ক্যাসিনো জাংকেট কিম অং, উইক্যাং ঝু, আরসিবিসির জুপিটার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মাইয়া সান্তোস দেগুইতো, মাইকেল ফ্রান্সিস ক্রুজ, জেনি ক্রিসটোপার লাগ্রোসাস, আলপ্রেড সান্তোস ভারগারা এবং এনরিকো তিয়োদরো ভাসকুইজের বিরুদ্ধে অপরাধ আইনে পৃথক মামলা করেছে এএমএলসি।