গরমে মরছে রেনু পোনা : উৎপাদন কমেছে ৭৫ ভাগ: হ্যাচারি ব্যবসায় দিনে দু’কোটি টাকার ক্ষতি

এক্সপ্রেস ডেস্ক: হ্যাচারি ব্যবসায় দিনে দু’কোটি টাকার ক্ষতিচলমান গ্রীষ্ম মৌসুমে মাছের সহনীয় তাপমাত্রার চেয়ে যশোরাঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় হাপা গুলোতে প্রতিদিন মাছ মারা যাচ্ছে বেশুমারভাবে। আর মারা যাওয়ায় মাছ সংগ্রহ অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছেন হাপা মালিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। যে কারণে রেনু পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারি গুলো উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে ৭৫ শতাংশের মত। সব মিলিয়ে জেলার মৎস্য সেক্টর তথা হ্যাচারি ও হাপা ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা প্রতিদিন প্রায় দু’কোটি টাকার লোকসান গুনছেন। গত দেড় সপ্তাহ ধরে যশোরাঞ্চলে তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলছে। ৩৬ থেকে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। যা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবেও দু’দিন রেকর্ড হয়েছে। যশোরাঞ্চলে এ তাপদাহ শুধু জনজীবনই দূর্বিসহ করে তোলেনি, এ অঞ্চলের জনগুরুত্বপূর্ণ মৎস্য সেক্টরেও প্রতিকূল প্রভাব ফেলেছে। মাছের রেনুপোনা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হ্যাচারি ও মধ্যসত্বভোগী বিকিকিনির সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট হাপা মালিকদেরও মাথায় হাত উঠেছে। প্রচন্ড গরমে প্রতিদিন মণ মণ পোনা মারা যাচ্ছে। এ ক্ষতির কারণে এ অঞ্চলের দু’শো হাপার মধ্যে বেশিরভাগ রেনু পোনা সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছে। আর উৎপাদন ৭৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে হ্যাচারি মালিকরা। যশোরের চাঁচড়া বাবলাতলা, চাঁচড়া বেলতলা, মাগুরপট্টি, কাজীপুর, ভাতুিড়য়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা মিলিয়ে দু’শোর মত হাপা রয়েছে। হাপা গুলোতে চারা মাছ অর্থাৎ রেনু পোনা কিছুদিন রেখে বিক্রি করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রচন্ড গরমে পানি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আর রেনু পোনা মারা যাচ্ছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় হাপাগুলোতে প্রয়োজনীয় পানিও সরবরাহ করা যাচ্ছেনা। স্যালো মেশিন ও ডিপটিউবওয়েলেও পানি ঠিকমত উঠছেনা। হাপায় পরিমানমত পানি দিতে না পারায় পানিতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না। মাছের সহনীয় তাপমাত্রার চেয়ে এ অঞ্চলে ১০/১২ ডিগ্রি বেশি। গত কয়েক সপ্তাহে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে হাপা সেক্টরে। এখন তাদের অনেকে রেনু পোনা সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে হাপায় রেনু ও পোনা সংগ্রহ কমিয়ে দেয়ায় হ্যাচারি মালিকগন উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির তালিকায় ৭৫টি হ্যাচারি রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের উৎপাদন একেবারেই বন্ধ রয়েছে। আর সচল ৩০ টি হ্যাচারি উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে অনেকাংশে। তারা আগের তুলনায় উৎপাদন কমিয়েছে ৭৫ শতাংশের মত। এ অঞ্চলে হ্যাচারি সেক্টরে প্রতিদিন তিন কোটি টাকার রেনু পোনা উৎপাদন হত। দাবদাহের প্রতিকুল প্রভাবে উৎপাদন প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার। প্রায় ৫০ হাজার লোক এ সেক্টরে কাজ করে। বর্তমানে কাজ করছে ২০ হাজারের মত। ডিম থেকে রেনু ও পোনা উৎপাদন হয় যশোরের হ্যাচারি গুলোতে। রুই, কাতলা, কালবাউস, শিং, মাগুর পুটি, মৃগেল জাপনি রুইসহ নানা জাতের রেনু রয়েছে উৎপাদনের তালিকায়। যশোরে এখন তাপদাহের কারনে হাপা ও হ্যাচারি মালিকদের মাথায় হাত উঠেছে। গরম না কমলে উৎপাদন স্বাভাবিক হবেনা বলেও দাবি হ্যাচারি ও হাপা সংশ্লিষ্টদের। হ্যাচারি ব্যবসায় দিনে দু’কোটি টাকার ক্ষতি এ ব্যাপারে যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি একাধিকবার রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত আলহাজ্ব ফিরোজ খান ও সাধারণ সম্পাদক একাধিকবার রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত জাহিদুর রহমান জাহিদ গোলদার গ্রামের কাগজকে জানান, গরমে জনজীবনের সাথে মৎস্য সেক্টরও চরম হুমকির মুখে। রেনু পোনা উৎপাদনে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না হ্যাচারি মালিকগন। কেননা হাপা মালিকরা রেনু বা পোনা কেনা কমিয়েছে সংগত কারণে। হাপায় প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ না থাকায় গরম পানির তাপ নিয়ন্ত্রনে থাকছেনা। ডিম থেকে রেনু উৎপাদনেই গরম প্রভাব ফেলছে। দ্রুত বৃষ্টি না হলে হ্যাচারি ব্যবসায় অশনী সংকেত দেখা দেবে। এদিকে চাঁচাড়া বাবলাতলার হাপা ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম, রিংকু, হাবিবুর রহমান হাবিব, জালাল আহমেদসহ ডজনখানেক ব্যবসায়ী জানান, তাদের মাছের পোনা মরে সাফ হয়ে যাচ্ছে। ম্যাশিনে পানি উঠছে না। গরম বাড়লেও পানি সরবরাহ বাড়াতে না পারায় মাছ মরছে। তাপমাত্রা না কমলে বা বৃষ্টি না হলে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। এ ব্যাপারে যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রমজান আলী গ্রামের কাগজকে জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যশোরে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছে। মাছের সহনীয় তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যে কারণে মাছ মরছে। শুধু হ্যাচারি বা হাপায় নয়, পুকুরেও একই অবস্থা। এখন শুধু পানি প্রয়োজন। ঠান্ডা পানি সরবরাহ করতে পারলে বা বৃষ্টি হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হবে।

Print
3589 মোট পাঠক সংখ্যা 1 আজকের পাঠক সংখ্যা

About admin

Close