এক্সপ্রেস ডেস্ক: বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরিতে তিনটি হ্যাকার গ্রুপের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেয়েছে বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই সাইবার আক্রমণের তদন্তকারীরা, যার মধ্যে একটি গ্রুপ পাকিস্তানের। বাংলাদেশের নিযুক্ত করা সিলিকন ভ্যালির সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ফায়ারআই’র তদন্তে এই তথ্য মিলেছে বলে বিশ্বের বাণিজ্যবিষয়ক অন্যতম শীর্ষ সংস্থা ব্লুমবার্গ মঙ্গলবার জানিয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্ক থেকে এই রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তে এফবিআই বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরের ব্যক্তিদের সন্দেহ করছে বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ব্যাংক লেনদেনের আন্তর্জাতিক মাধ্যম সুইফটের মাধ্যমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে চুরি যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ফায়ারআইকে ফরেনসিক তদন্তের দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ। সেই তদন্ত এখনও শেষ না হলেও ফায়ারআইয়ের তদন্তকারীরা এই চুরিতে পাকিস্তানি একটি হ্যাকারের গ্রুপের জড়িত থাকার তথ্য জানা গেল। বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং পাকিস্তানের কূটনীতিকদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ঢাকা ও ইসলামাবাদের সম্পর্কে টানাপোড়েনের মধ্যে এই সংবাদ প্রকাশ করল ব্লুমবার্গ। ফায়ারআই’র দুজন কর্মকর্তা ব্লুমবার্গকে বলেছেন, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়ার দুটি হ্যাকার গ্রুপ এই সাইবার চুরিতে জড়িত বলে ফরেনসিক পরীক্ষায় তারা তথ্য পেয়েছেন। তবে অন্য হ্যাকার গ্রুপটি কারা এবং কোন দেশের, তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি ফায়ারআই’র তদন্তকারীরা। হ্যাকিয়ের বিষয়ে কথা বলতে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করেছিল ব্লুমবার্গ। তবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়া মিশনের কর্মকর্তাদের টেলিফোন এবং ইমেইল করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে। আর্থিক খাতের কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের সাইবার আক্রমণের অভিযোগ বহু দিন থেকে করা হচ্ছে। তবে পিয়ংইয়ং বরাবর তা নাকচ করে আসছে। বাংলাদেশের রিজার্ভ যে দুটি দেশে সরানো হয়েছিল, তার একটি ফিলিপিন্সের তদন্তকারীরা এই সাইবার আক্রমণের জন্য চীনের হ্যাকারদের দুষলেও পেইচিং তা নাকচ করে আসছে। নিরাপত্তার ব্যবস্থার কোন ফোকর গলে তিনটি হ্যাকার গ্রুপ সুযোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ারআই কর্মকর্তারা। এক কর্মকর্তা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কে হয়ত ম্যালঅয়্যার বসানো হয়। হতে পারে এতে ব্যাংকের ভেতর থেকে কেউ সহায়তা করেছে। রিজার্ভ চুরির এই ঘটনা তদন্তে গঠিত সরকারি কমিটির প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ইতোমধ্যে বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রযুক্তি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গলদ এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতার অভাব ধরা পড়লেও সচেতভাবে কোনো কর্মকর্তা জড়িত বলে প্রমাণ পাননি তারা। এই ঘটনায় করা বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির কর্মকর্তারাও একই কথা বলছেন। তারা আবার সুইফটের দায়িত্বহীনতার দিকে অভিযোগ তুলেছেন। এরমধ্যেই এফবিআইয়ের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মঙ্গলবার জানায়, রিজার্ভ চুরির এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরকার কেউ সহায়তা করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত একজন কর্মকর্তা এতে জড়িত বলে তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। অন্য কয়েকজন হতে পারে সহায়তাকারী।

বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরিতে ‘পাকিস্তানি হ্যাকার গ্রুপ’
3124 মোট পাঠক সংখ্যা 1 আজকের পাঠক সংখ্যা