রিজার্ভের মতো একই কায়দায় চুরি হয়েছিল সোনালী ব্যাংকের টাকাও

এক্সপ্রেস ডেস্ক: ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির আগেই ২০১৩ সালে দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংকেও একই কায়দায় হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছিল। আর সেটাও হয়েছিল বিশ্বব্যাপী আর্থিক মেসেজিং নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফটের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে।

ওই সময় ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সোনালী ব্যাংকের ওই অর্থ চুরির বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই ঘটনা বাইরের মানুষ না জানলেও ভেতরে ভেতরে তদন্ত চলেছে। তবে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির পর পুলিশ এখন বড় পরিসরে তদন্ত করছে যে রিজার্ভ চুরির সাথে সোনালী ব্যাংকের অর্থ চুরির কোনো সংযোগ আছে কিনা।

সোনালী ব্যাংকের বলছে, ২০১৩ সালের হ্যাকিংয়ের ঘটনা সম্পর্কে সুইফট অবহিত ছিল এবং তুরস্কের প্রাপকদের কাছ থেকে টাকা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। ব্যাংকের একটি সূত্রও এমন তথ্য জানিয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের ওই হ্যাকের ঘটনা রিজার্ভ চুরির মতো ঠিক একই কায়দায় হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ পর্যালোচনা করে দেখছে সোনালী ব্যাংক ও রিজার্ভ চুরির সাথে অপরাধীদের কোনো সংযোগ আছে কিনা।

ব্যাংকটির আইটি বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সোনালী ব্যাংকের কম্পিউটারের কেলগার সফটওয়্যার ইনস্টল করে অন্যান্য সিস্টেমে পাসওয়ার্ড নিয়ে হ্যাকাররা তা দিয়ে সুইফটে অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধ পাঠায়।

‘এই ঘটনায় অর্থ স্থানান্তর নির্দেশাবলী অনুমোদনের জন্য দায়িত্ব ছিল ব্যাংকের এমন দুই কর্মচারীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু পরে কোনো অভিযোগ ছাড়াই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’

এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, ‘হ্যাকাররা এখনো অবাধে ঘুরছে এবং হ্যাক হওয়া কোনো অর্থই উদ্ধার হয়নি। কী ঘটেছিল তার কিছুই আমরা বের করতে পারিনি।’

সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে অর্থ হ্যাকের এটি চতুর্থ ঘটনা, যা সাম্প্রতিক সময়ে জনসম্মুখে এলো। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের ঘটনা দুটি একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত কী না তা এখনো জানা যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির খবর প্রকাশ্যে আসার পর সাইবার আক্রমণের শিকার তৃতীয় ব্যাংকের নাম ইকুয়েডরের বানকো দেল অস্ট্রোর। ২০১৫ সালে সাইবার অপরাধীরা সেসময় ১২ মিলিয়ন ডলার চুরি করেছিল। যেটা স্থানান্তরিত হয়েছে হংকংয়ের কয়েকটি ব্যাংকে।

আর গত বছরের শেষদিকে ভিয়েতনামের তিয়েন ফং ব্যাংকের সুইফট সার্ভার থেকে এক মিলিয়ন ইউরোর বেশি অর্থ স্থানান্তরের ভুয়া আদেশ পাঠানো হয়। পরে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটা আটকে দিতে সমর্থ হয়।

সোনালী ব্যাংকে চুরির সময়ে বাংলাদেশে মিডিয়ায় এ নিয়ে রিপোর্ট হয়েছিল। কিন্তু মানুষ এটা ভুলে গেছে। তবে পুলিশ বলছে, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চুরির সঙ্গে তার মিল থাকায় তারা সচেতন হয়ে উঠেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি একটি মজার বিষয় যে আমরা জানতে পারছি। আমরা এটাকে পর্যবেক্ষণ করবো।’

বেলজিয়ামভিত্তিক এই সেবাদান প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সুইফট সুবিধা দেয়। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনা প্রমাণ করছে, বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনা কোন একক ঘটনা ছিল না। কিন্তু ওই ঘটনাটি ছিল ব্যাপকতর। আর হামলার এসব ঘটনা নিশ্চিতভাবেই বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থার নেটওয়ার্ক নিরাপত্তার উপর আস্থা আরো কমাবে বলে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির পর এরই মধ্যে নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সুইফট। নিরাপত্তা জোরদারের কথা বললেও কোনো ঘটনারই দায় স্বীকার করেনি প্রতিষ্ঠানটি। সোনালী ব্যাংকের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন সুইফটের মুখপাত্র নাতাসা ডি তেরান। তিনি বলেন, ‘আমরা সক্রিয়ভাবে এই ধরনের জালিয়াতি ও অন্যান্য সম্ভাব্য দৃষ্টান্ত খুঁজছি, কিন্তু আমরা পৃথক একটা বিষয়ের উপর মন্তব্য করবো না।’

তবে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ড. ফরাসউদ্দিনও সুইফটের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়, রিজার্ভ হাতিয়ে দেওয়ার দায় সুইফটও এড়াতে পারে না। সোনালী ব্যাংকের ঘটনা তদন্ত করছে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তারাও কোনো মন্তব্য করেনি।

Print
3050 মোট পাঠক সংখ্যা 1 আজকের পাঠক সংখ্যা

About jexpress

Close