স্বাস্থ্য ডেস্ক: ল্যাপ্টোসোরিয়াসিস একটি পানিবাহিত রোগ যা সংক্রমিত মল ও ইঁদুরের প্রস্রাবের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি হয়ে থাকে ল্যাপ্টোস্পাইরা ব্যাকটেরিয়ার কারণে এবং বর্ষায় এটি ছড়ায়। বন্যায় প্লাবিত রাস্তা দিয়ে হাঁটার ফলে এই রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। ত্বকের কাটা বা ক্ষতের মধ্য দিয়ে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে। ল্যাপ্টোস্পাইরা ব্যাকটেরিয়ার দেহে প্রবেশের ২ সপ্তাহ পরে লক্ষণ প্রকাশ পায়। সারা পৃথিবী জুরে থাকলেও সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এই রোগের প্রকোপ বেশি। চলুন জেনে নিই ল্যাপ্টোসোরিয়াসিসের উপসর্গগুলো সম্পর্কে।
১। ল্যাপ্টোসোরিয়াসিসে আক্রান্ত রোগীর তীব্র জ্বর হয় এবং পেশী ও শরীরে ব্যথার অভিযোগ করেন রোগী। ল্যাপ্টোসোরিয়াসিসের লক্ষণ অনেকটা ডেঙ্গুর মতোই। তবে ল্যাপ্টোসোরিয়াসিসের ফলে শরীরে যে ব্যথা হয় তা অনেক খারাপ হয়।
২। ল্যাপ্টোস্পাইরা ব্যাকটেরিয়ার শরীরে প্রবেশ করলে তীব্র মাথাব্যথা ও শরীর ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে যা নিজে নিজে ভালো হয়না। মোম্বাই এর ফরটিস হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. প্রদীপ শাহ্ বলেন, “ল্যাপ্টোসোরিয়াসিস একটি নিরাময়যোগ্য রোগ এবং কিডনি ও লিভার এর ক্ষতি এড়াতে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন”। এই রোগটি মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে তখন তাকে ওয়েলস ডিজিজ বলে।
৩। প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায় বলে ল্যাপ্টোস্পাইরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির সারা শরীরে র্যাশ হতে দেখা যায়। একে হেমোরেজিক র্যাশ বলে।
৪। ল্যাপ্টোস্পাইরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্ডিস হতে দেখা যায়। তাদের চোখ ও ত্বক হলুদ দেখায়। কিছুক্ষণ পরে রোগীর চোখ রক্তাভ দেখায়।
৫। আক্রান্ত ব্যক্তির মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে এবং যদি চিকিৎসা করা না হয় তাহলে রোগীর ইন্টারনাল ব্লিডিং হতে পারে।
৬। বমি ও ডায়রিয়া এই রোগের সাধারণ লক্ষণ। সময়মত চিকিৎসা করা হলে রোগী কয়েকদিন হতে ৩ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হলে রোগীর ভালো হতে কয়েকমাস লেগে যায় মেনিনজাইটিসের কারণে। রোগীর ফুসফুস আক্রান্ত হলে মারাত্মক অবস্থা হতে পারে।
রোগ নির্ণয় :
এই রোগ নির্ণয় করা কঠিন হলেও রক্ত ও ইউরিনের মাধ্যমে তা নির্ণয় করা যায়। অসুস্থতার প্রাথমিক পর্যায়ে ল্যাপ্টোস্পাইরা রক্ত ও প্রস্রাবের মধ্যে শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা :
তীব্র ল্যাপ্টোসোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে চিকিৎসক টেট্রাসাইক্লিন এন্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দেন। মারাত্মক ধরণের ল্যাপ্টোসোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন হয়।
প্রতিরোধের উপায় :
যারা নিয়মিত সাঁতার কাটেন তাদের ত্বকে কোন কাটা বা ক্ষত থাকলে তা ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে নেয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে পশুর সংস্পর্শে কাজ করার সময় বা পানিতে কাজ করার সময় সুরক্ষার জন্য গ্লাভস, মাস্ক, বুট জুতা ও গগলস ব্যবহার করা উচিৎ। অন্য দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ল্যাপ্টোসোরিয়াসিস হয় এমন স্থানের মিঠা পানিতে সাঁতার কাটা উচিৎ নয়। ফুটানো পানি পান করা উচিৎ। ত্বকের কোন স্থানে কেটে গেলে দ্রুত এটি পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে নিন।