ডাক্তারদের দায়িত্ব :
দীর্ঘদিন ধরে অপচিকিৎসায় লাখ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, জীবন দিয়েছে।
ডাক্তারদের যে সব আচরণ অবহেলা হিসেবে গণ্য হয়, সেগুলোর মধ্যে রোগীকে সঠিকভাবে পরীক্ষা না করা, ভুল ঔষধ বা ইনজেকশন প্রয়োগ, ভুল অপারেশ করা, অস্ত্রপাচারের উপকরণ রোগীর শরীরের ভেতর রেখে দেওয়া প্রভৃতি। এ ছাড়া রোগীর সঙ্গে দূর্ব্যবহার, ফি নিয়ে দরকষাকষিও চিকিৎসকদের অবহেলার মধ্যে পড়ে।
মূলত চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবহেলা-সংক্রান্ত অপরাধ বলতে ডাক্তারী অবহেলাকেই বোঝানো হয়। ডাক্তারি অবহেলা বলতে শুধু ডাক্তারদের অবহেলা নয়, এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা, নার্স, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টেকনিশিয়ান, ওষুধ সরবরাহ ও সরবরাহকারীদের অবহেলা প্রভৃতিও বোঝানো হয়।
এর একমাত্র কারণ কোথাও জবাবদিহিতা নেই। কাউকে কোথাও বদলি করলে রাজনৈতিক তদবির তো আছেই। ঘুরেফিরে বহাল তবিয়তেই থাকেন তারা। এত আরাম, অর্থ, বিত্ত, প্রভাব ডাক্তারদের মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে।
চিকিৎসাসেবায় বিভিন্ন অপরাধের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আইনে থাকলেও অধিকাংশ জনগনই তা জানে না। এজন্য সুষ্পষ্ট আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। ফলে চিকিৎসায় অবহেলা-সংক্রান্ত অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রভাবশালী, সম্পদশালীরা নিতান্ত দায় না ঠেকলে সরকারি হাসপাতালে আসে না।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে এরকম অবহেলা ও বিভিন্ন অপরাধ সংঘটন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, চিকিৎসাসেবা রাষ্ট্রের নাগরিকের অন্যতম মৌলিক চাহিদা হলেও চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে চরম অরাজকতা অবস্থা বিরাজ করছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সরকারী হাসপাতালে কর্তব্য পালন অবস্থায় প্রাইভেট ক্লিনিকে কর্মরত থকেন, যা একটি অপরাধ। আবার অনেকেই নিজেদের উপার্জিত ডিগ্রির পাশে অনেক ভূয়া বিদেশী ডিগ্রি জুড়ে দেন, যা অন্যায় ও প্রতারণার শামিল।
ডাক্তারি রিপোর্ট বা পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ভুল উপায় সংযোজন করা, মনগড়া রিপোর্ট ও জালিয়াতি করা একটি অপরাধ। এ ছাড়া রোগীর মূল দলিল দিতে অবাধ্যতা, বারবার রোগীকে হেনস্থা করা, হাসপাতালের প্রয়োজনীয় সিট না বরাদ্দ দিয়ে অন্যত্র ব্যবস্থা করা প্রভৃতিও অবহেলা-সংক্রান্ত অপরাধের শামিল। অপারেশনে নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত ফি দাবি করাও একটি অন্যায়মূলক কাজ। বালাদেশে চিকিৎসা-সংক্রান্ত মামলা তেমন একটা হয় না বললেই চলে।
মানুষ। বাংলাদেশের দণ্ডবিধি আইনে ষ্পষ্ট বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি অবহেলা বা যথেচ্ছ ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে অপর কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটান, তবে সে ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারার অপরাধ করেছেন মর্মে গণ্য হবেন।
যখন কোনো রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং চিকিৎসক ওই রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু সংঘটিত হলে চিকিৎসক ৩০৪(ক) ধারার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
সম্প্রতি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসানের দায়ের করা এক রিট আবেদনে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আগে এসব নির্দেশনা কেন মানা হবে না তা চ্যালেঞ্জ করা হয়।
ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত এ রুল জারি করেন।
৯ সেপ্টেম্বর সোমবার বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি অবকাশকালীন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য সচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রুলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আমলে নেয়া, তদন্ত এবং গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কেন নিম্নলিখিত নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে:
(১) অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালত কোনো মামলা গ্রহণের পূর্বে একজন স্বাধীন চিকিৎসকের কাছ থেকে বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ করবেন। তার কাছ থেকে অবহেলা সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হলেই কেবলমাত্র মামলা আমলে নেয়া বা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা যাবে।
(২) থানায় এজাহার পাওয়ার পর চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ তদন্ত করতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি কমিটি গঠন করতে হবে। ওই কমিটির কাছ থেকে অবহেলা সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হলেই কেবল মামলা আমলে নেয়া বা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা যাবে।
(৩) চিকিৎসাধীন রোগী মুত্যুর পর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, হাসপাতাল বা ক্লিনিক যদি হামলার আশঙ্কা করেন তাহলে চাহিদা অনুযায়ী পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ অপরাধের ক্ষেত্রে হটকারিতা, অসতর্কতা, অবহেলা বা বেপরোয়া কাজ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়। রশিদুল্লাহ বনাম রাষ্ট্র (২১) ডিএলআর (৭০৯) মামলায় বলা হয়েছে, বেপরোয়া বা হটকারি কাজ মানে হচ্ছে কোনো বিপজ্জনক কাজের ঝুঁকি নেওয়া এবং সতর্কতার সঙ্গে কাজটি সম্পাদন করা। ডাক্তারি অবহেলাও দণ্ডবিধির এ ধারায় অন্তর্ভূক্ত হবে।
এছাড়া ৩১৪ ধারায় গর্ভপাত-সংক্রান্ত অপরাধ এবং ৩২৩ থেকে ৩২৬ ধারায় অন্তভূর্ক্ত অবহেলা সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের শাস্তির আওতায় ডাক্তারি অবহেলা সংক্রান্ত অপরাধের প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া দণ্ডবিধির ৩৩৬ ধারা অনুযায়ী, বেপরোয়া কাজ বা অবহেলার কারণে প্রাণনাশ বা নিরাপত্তা বিঘিœত হলে সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা জরিমানার কথা উল্লেখ আছে।
দণ্ডবিধির ৩৩৭ ধারাতেও অবহেলাজনিত কারণে আঘাত দিলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত শাস্তির বিধান আছে। তবে ৩৩৮ ধারাটি ডাক্তারি অবহেলা-সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিকারের ক্ষেত্রে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ধারায় উল্লেখ আছে, যে কোনো ধরণের বেপরোয়া কাজ বা অবহেলার কারণে আঘাত দিলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা দুটি একসঙ্গে দেওয়া যাবে।
এছাড়া বাংলাদেশে দ্য মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেজিষ্ট্রেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ নামে একটি আইন আছে। যাতে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে এবং প্রাইভেট ক্লিনিক স্থাপন ও পরিচালনায় সুষ্পষ্ট নিয়ম প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী কোনো সরকারী চাকুরিতে নিযুক্ত আছেন, এমন কোনো রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক অফিস চলাকালীন কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা নার্সিং হোমে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না এবং করলে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সুষ্পষ্ট আইনের অভাব। এরপরও অপ্রতুল আইনি ব্যবস্থায় যা আছে, তাতে ডাক্তারি অবহেলা একই সঙ্গে দেওয়ানি ও ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা যায়। টর্ট আইনে অবহেলা বলতে বোঝানো হয়েছে, কারও প্রতি যত নেওয়ার আইনগত দায়িত্ব পালনে অপরের ব্যর্থতা।
টর্ট আইনে বা দেওয়ানি মামলায় ডাক্তারি অবহেলার বিরুদ্ধে হয়রানি, মানহানি, মিথ্যা প্রলোভন সহ ক্ষতিপূরণের মামলা করা যাবে। কিন্তু আমাদের দেশে দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে বেশ জটিলতা দেখা যায় এবং এর পরিচালনায় প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়, যা দরিদ্র লোকের পক্ষে জোগাড় করা দুরূহ। এছাড়া সাক্ষ্য গ্রহণেও দেখা দেয় জটিলতা। এ ধরণের মামলায় মূলত ডাক্তার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষী করতে হয়।
ফলে ঘটনার ব্যাপারে সত্যতা উদঘাটন অসম্ভব হয়ে যায় এবং প্রতিকার সম্ভব হয় না।
রোগীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই চিকিৎসক অনেক টেস্ট করাতে পরামর্শ প্রদান করেন। যদি ১০ প্রকার টেস্ট করানো হয়ে থাকে, তাহলে বেশির ভাগ টেস্টের ফলাফল থাকে নরমাল (স্বাভাবিক)। অর্থাৎ টেস্টে রোগীর কোনো অস্বাভাবিকতা নেই।
এতে সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয় যে, চিকিৎসকরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত টেস্ট করাতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে কেন তারা রোগীদের অতিরিক্ত টেস্ট করাতে পরামর্শ প্রদান করেন? জবাব খুব সহজ, যখন কোনো রোগী চিকিৎসকের পরামর্শপত্র নিয়ে টেস্ট করানোর উদ্দেশে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে উপস্থিত হন তখন রোগীর কাছ থেকে টেস্টের ন্যায্য চার্জের দ্বিগুণ আদায় করা হয় এবং পরামর্শ প্রদানকারী চিকিৎসকের নাম-ঠিকানা নোট করে রাখা হয়।
পরে রোগীর কাছ থেকে আদায়কৃত চার্জের ৪০-৫০ শতাংশ গোপনে চিকিৎসককে দিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকও নির্দ্বিধায় সে অর্থ গ্রহণ করেন।
এটা কি রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রতারণা বা দুর্নীতি নয়?
চিকিৎসাবিদ্যা অনুশীলনকারীদের দায়িত্ব
মেডিকেল সার্টিফিকেট আইনি কাগজপত্র আছে. ইচ্ছাকৃতভাবে একটি মিথ্যা, ভুল বা বেঠিক শংসাপত্র প্রদান যারা চিকিৎসা অনুশীলনকারীদের স্বাস্থ্য পেশাদার রেগুলেশন ন্যাশনাল ল অধীনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা মুখোমুখি পারে. চিকিৎসাবিদ্যা অনুশীলনকারীদের এছাড়াও নাগরিক বা অপরাধমূলক আইনি ব্যবস্থা নিজেদের এক্সপোজ করতে পারেন. চিকিৎসাবিদ্যা অনুশীলনকারীদের তাদের অপেক্ষা আসরে এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রদর্শন করে তাদের রোগীদের সাহায্য করতে পারেন । নিয়োগকর্তা , যুক্তিসঙ্গত পরিস্থিতিতে একটি শংসাপত্র জারি যারা চিকিত্সক থেকে অতিরিক্ত তথ্য চাওয়া হতে পারে. নিয়োগকর্তার কোন তথ্য প্রদান করার পূর্বে, চিকিত্সক নিয়োগকর্তা এর পরিচয় যাচাই করা উচিত এবং তাদের নিয়োগকর্তার আরও প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রকাশ করার আগে রোগীর থেকে দ্রুতগামী অনুমতি প্রাপ্ত।
একজন নিয়োগকর্তা যোগাযোগ একটি অসুস্থতা সার্টিফিকেট ( যেমন , এটা কোন ভাবেই প্রতারণাপূর্ণ যদি নির্ধারণ ) এর veracity যাচাই করার জন্য চিকিৎসক , চিকিৎসক নিয়োগকর্তা এর পরিচয় যাচাই করার জন্য এবং সার্টিফিকেটের veracity নিশ্চিত করা উচিত কোথায় ডাক্তার রোগীর দ্রুতগামী অনুমতি ছাড়া রোগীর সম্পর্কে অন্য কোন তথ্য প্রদান করা উচিত নয়, ডাক্তার এটা সে তা করার অনুপযুক্ত মনে যদি একটি শংসাপত্র প্রদান পতন হতে পারে।
http://littlemagliteature.blogspot.com/2013/…/blog-post.html
লেখক: আইনজীবি।
তথ্য: ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি, ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি , বাংলাদেশ সংবিধান, হিউম্যান রাইটস ল, সুপ্রীম কোর্ট, বাংলাদেশ এর সিদ্ধান্ত।
” মুক্তমত প্রকাশিত লেখকের একান্তই নিজস্ব। দৈনিক যশোর এক্সপ্রেস ডটকমের সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নেই। লেখকের বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে দৈনিক যশোর এক্সপ্রেস কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না। ”